পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
সুন্দর

কি সুন্দর এবং কি সুন্দর নয় এ নিয়ে ভারি গোলমাল বাধে যে রচনা করছে এবং যার বুচনাটি দেখছে বা পড়ছে কিংবা শুনছে তাদের মধ্যে ; কেননা সবারই মনে একটা করে’ সুন্দর অসুন্দরের হিসেব ধরা রয়েছে, সবাই পেতে চায় নিজের হিসেবে যা সুন্দর তাকেই, কাজেই অন্তের রচনার সৌন্দর্যের হিসেবে সে নানা ভুল দেখে। নিজের রচনাকে ইচ্ছা করে খারাপ করে দিতে কেউ চায় না, যথাসাধ্য সুন্দর করেই রচনা করতে চায় সবাই, কেউ পারে সুন্দর করতে কেউ বা পারে না। আমার হাতে বাণী দিলে বেসুরে বাজবেই, অকবি যে সে কবিতা লিখতে গেলে মুস্কিলে পড়বেই। কচ্ছপ জলে বেশ সাতার দিতে কিন্তু বাতাসে গা ভাসান দেওয়া তার পক্ষে এক নিমেষও সম্ভব হয়নি, অথচ আকাশে ওড়ার মতো কবিতা ছবি ইত্যাদি রচনার ঝোক তাবৎ মানুষেরই মধ্যে রয়েছে। গান শুনে মনে হয় বুঝি আমিও গাইতে পারি, মন মেতে ওঠে এমন যে ভুল হয়ে যায় স্বরের পার্থী বুকের খাচায় ধরা দেয়নি একেবারেই। বালক যখন সুরে বেম্বরে তালে বেতালে মিলিয়ে নেচে গেয়ে চল্লো তখন তার সব অক্ষমতা সব দোষ ভুলিয়ে দিয়ে প্রকাশ পেলে শিশুকণ্ঠের এবং সুকুমার দেহের ভাষাটির অপূর্ব সৌন্দর্য, কিন্তু বড় হয়ে ছেলেমে করা তো সাজে না একেবারেই ! তবেই দেখা যাচ্ছেও স্বান কাল পাত্র হিসেবে সুন্দর ও অসুন্দর এই ভেদ হচ্ছে নানা রচনার মধ্যে । হরিণ সে বঁাশী শুনে ভোলে, সাপ সে বঁাশী শুনে ফণা তুলে তেড়ে আসে, সাপ-খেলানে বঁাশী সাপের কানে সুন্দর স্বর দিলে, মানুষের কানে হয় তো খানিক সেটা ভাল ঠেকলো, তাই বলে’ বিয়ের রাতে সানাই উঠিয়ে নহবতখানায় সাপুড়ে এনে বসিয়ে দেয় কেউ ? অবশু রুচিভেদে গড়ের বাছি ঢাকের বাছি বিয়ের রাতে এসে জোটে, ঘুমন্ত পাড়ার কানের শ্রবণশক্তি তেজস্কর পদার্থ দিয়ে জাগিয়ে দিয়ে কনসার্টের দলও অলিতে গলিতে এসে আবিভূত হয়; কিন্তু নিজের মনকে প্রশ্ন করে’ দেখ, সে নিশ্চয়ই বলবে যে কিছুক্ষণের জন্য বলেই এ সব সইছে ; ঢাকের বাছি থামলেই মিষ্টি—এটা মানুষের মন বলেই দিয়েছে বহুকাল আগে,