পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অসুন্দর
২১৫

সত্য ঘটনা ধরে বর্ণনা করা হ’ল ঠিক তেমন ভাবে ঋরিরা ঊষার বর্ণনা করলেন না, সেখানে সত্য ও কল্পনা মিলে’ মিশে সুন্দর হয়ে দেখা দিলে। সুতরাং তর্ক-বিতর্ক করে’ সুন্দর-অসুন্দরের ধারণা হওয়া আমার তো মনে হয় অসম্ভব ব্যাপার। ফোটা ফুল গন্ধ নিয়ে সুন্দর, না তার পাপড়িগুলির যথাযথ বিন্যাসটি নিয়ে, না তার ফোটার আদ্যন্ত রহস্য নিয়ে সুন্দর,—এ তর্কের তো শেষ নেই। যাকে বলতে চাই অসুন্দর তার বেলাতেও এই কথা ওঠে—কেন অসুন্দর?

 দীপশিখা সে যেমন ভয়ঙ্কর সত্য তেমনি ভয়ঙ্কর সুন্দর কিন্তু যেখানে সে ছেলের হাত পোড়ালে ঘরে আগুন ধরালে সেখানে সুন্দর বলে’ গৃহস্থ তাকে মনে করলে না। শান্তিনিকেতনে এমনি একটা লঙ্কাকাণ্ড দেখে আমার একটা ছাত্র এতটা মুগ্ধ হয়েছিলেন যে একটি চমৎকার সুন্দর ছবি পরদিনের ডাকেই আমার কাছে এসে পড়েছিল। যদি আর্টিষ্টের নিজের ঘরে এই কাণ্ডটা ঘটতো তবে তিনি নিশ্চয় সুন্দর দেখতেন না অগ্নিকাগুটি। এখানে দেখলেম, সুন্দর তিনি অমঙ্গলের রাজবেশ ধরে’ দেখা দিলেন আর্টিষ্টকে, আর এ কথাও তো মিথ্যা নয় এই ‘রাজবৎ উদ্ধদ্যুতি’ অগ্নিশিখাগুলি তার কাছে সে রাত্রে ভারি অসুন্দর ঠেকেছিল যার ঘরদ্বার পুড়ে ছাই হচ্ছিল। একের পক্ষে যা অসুন্দর হ’ল তার স্বার্থে ঘা দিচ্ছে বলে’, অন্যের পক্ষে তাই সুন্দর হয়ে দেখা দিলে স্বার্থে ঘা দিলে না বলে’। অগ্নিকাণ্ডের ছবিখানা কিন্তু এই দুই মানসিক অবস্থার বাইরের জিনিষ হ’য়ে তবেই সুন্দর হ’ল, যাদের ঘর পুড়লে তাদের কাছে, যাদের ঘর পুড়লো না তাদেরও কাছে। প্রকৃতির মধ্যে আসল ঘর পোড়ার সময়ের যে অমঙ্গলের আশঙ্কা মনকে বিমুখ কচ্ছিলে, ছবির অগ্নিশিখার লেলিহান উজ্জ্বল ছন্দটি থেকে সেটি বাদ গেল, রইলো শুধু দৃশ্যটির সৌন্দর্য ও রস, কাজেই সুন্দর ঠেকলো। এইভাবে আর একটি সদ্য জবাই করা মোরগের ছবি ভয়ঙ্কর সত্যরূপে এঁকে এনেছিল আমার সামনে আমার আর এক ছাত্র। ভারি বিস্ত্রী ঠেকলো সে ছবি, আমার সইলো না মনেও ধরলে না, চোখের কাছে এসেই ঠিকরে পড়লে মাটিতে। এখন যদি বলা যায় এ ছবি নিশ্চয় মুন্দর ঠেকবে অন্যের কাছে, এর জবাব কি দেবো?—হাঁ সুন্দর ঠেকবে এই কথাই কি বলতে হবে না? আমাকে যে ভাবে ছবিটা পীড়া দিলে