পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২১৬
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

সে ভাবে অন্যকে নাও দিতে পারে, সুতরাং আমার অসুন্দর অন্যের সুন্দর এটা বলা চল্লো।

 বিশ্বের কতকগুলো জিনিষকে মানুষের মন বিনা তর্কে সুন্দর বলে’ মেনে নিয়েছে, কতকগুলো জিনিষকে বলে গিয়েছে অসুন্দর। কালের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কতক জিনিষ সুন্দর বলে’ প্রশংসা পেয়েছে, কতক জিনিষ এ পরীক্ষায় এখনো উত্তীর্ণ হয় নি, সেগুলো রয়ে গেছে অসুন্দর। হয়তো দেখবো এই সব অসুন্দর হঠাৎ একদিন পরীক্ষা পাস হ’য়ে গেছে, ওস্তাদের এবং কারিগরের হাতে পড়ে’ তারা মুলুর হ’য়ে উঠেছে, ধূলোমুঠে। হ’য়ে গেছে সোনা-মুঠো!

 বিশ্ব-প্রকৃতির মধ্যে দুটি তিনটি কারিগর রয়েছে এক ওস্তাদের তাঁবেদার, তারা সকালে আসে সন্ধ্যায় আসে দিনে আসে রাতে আসে— আলো অন্ধকারের অধিবাসের ডালা নানা সাজসজ্জার উপকরণে ভরে’ নিয়ে। সৃষ্টির জিনিষকে নূতন নূতন সুন্দর সাজে সাজিয়ে চলাই তাদের কায। কোনদিন অবেলায় আফিস ঘরে চুপি চুপি ঢুকে’ দেখলে দেখা যায়, সেখানে এসেও এই কারিগর কয়জন অতি অসুন্দর দোয়াত কলম খাতাপত্র টেবেল চেয়ার এমন কি বেহারার ঝাড়নটাকে পর্যন্ত চমৎকার আলো নয়তো চমৎকার ছায়া দিয়ে আশ্চর্য সৌন্দর্য দিয়ে গেছে —সেই আলো-অন্ধকারের রহস্য; তার মাঝে কাল যে হতভাগা বেরাল ছানাটাকে ঘর থেকে বার করে দিয়েছিলেম সে এসে ঘুমিয়ে আছে অপূর্ব্ব সাজ ধরে রূপ’ কথার বেরাল রাজকন্যাটির মতো।

 যার মধ্য দিয়ে কোন রহস্য গতাগতি করছে না, যার মধ্যে কোনো বৈচিত্র্য পলকে পলকে বদল ঘটাচ্ছে না এমন জিনিষ যদি কোথাও থাকে তো সেইটিই অসুন্দর একথা নিঃসংশয়ে বলা যেতে পারে। যা চরিত্রবিহীন তা অসুন্দর। চরিত্র বিষয়ে একেবারে নিঃস্ব এমন কি জিনিষ আছে তা খুঁজে পাইনে; এটুকু বলা যায় যা তার চারিদিকের সঙ্গে যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন, কটু কি মধু আমাদের কোন স্বাদই দেয় না—তা আমাদের কাছে থেকেও নেই। বিস্বাদ যা তারও একটা স্বাদ আছে, যার চরিত্র নেই একেবারেই, যা কোন স্বাদই দেয় না, এমন কিছু থাকে তো তাকেই বলি অসুন্দর। এর চেয়ে পরিষ্কারভাবে অসুন্দরকে দেখানোই শক্ত, কেননা জগতে সুন্দর অসুন্দর একটা পরিষ্কার ব্যবধান নিয়ে বতর্মান