পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।



শিল্পে অধিকার
১৭

রং-তুলি, কলকারখানা, দোয়াত-কলম, বাজনা-বাদ্যি সে মোটেই সয় না। এক তুলি, এক কাগজ, একটু জল, একটি কাজললতা—এই আয়োজন করেই পূবের বড় বড় চিত্রকর অমর হয়ে গেলেন। কবীর এর চেয়ে কমে চলে গেলেন। কাগজ আর কলম, কিম্বা তাও নয়—একতারা কি বাঁশী, অথবা তাও যাক্—শুধু গলার সুর। সহজকে ধরার সহজ ফাঁদ, এই ফাঁদ নিয়েই সবাই তাঁরা চল্লেন—কেউ সোণার মৃগ, কেউ সোণার পদ্মের সন্ধানে। এ যেন রূপকথার রাজপুত্রের যাত্রা—স্বপ্নপুরীর রাজকুমারীর দিকে; সাজ নেই, সরঞ্জাম নেই, সাথী সহচর কেউ নেই। একা গিয়ে দাঁড়ালেম অপরিমিত রস-সাগরের ধারে, মনের পাল সুবাতাসে ভরে উঠলো তো ঠিকানা পেয়ে গেলেম! রূপকথার সব রাজপুত্রের ইতিহাস চর্চা কর তো দেখবে—কেউ তাজি ঘোড়ায় চড়ে সন্ধানে বার হয়নি, এই যেমন-তেমন একটা ঘোড়া হলেই তারা খুসি। এও তো এক আশ্চর্য ব্যাপার শিল্পের—এই যেমন-তেমনের উপরে সওয়ার হয়ে যেমনটি জগতে নেই, তাই গিয়ে আবিষ্কার করা! মাটির ঢেলা, পাথরের টুকরো, সিঁদূর, কাজল—এরাই হয়ে উঠ্‌লো অসীম রস আর রহস্যের আধার!

 রসের তৃষ্ণা শিল্পের ইচ্ছা যার জাগবে, সে তো কোনো আয়োজনের অপেক্ষা করবে না;—যেমন করে হোক সে নিজের উপায় নিজে করে নেবে; এ ছাড়া অন্য কথা নেই। একদিন কবীর দেখলেন একটা লোক কেবলই নদী থেকে জল আমদানি করছে সহরের মধ্যে চামড়ার থলি ভরে-ভরে। সে লোকটার ভয় হয়েছে নদী কোন দিক্ দিয়ে শুকিয়ে যাবে! মস্ত বড় এই পৃথিবী নীরস হয়ে উঠেছে, তাই সে রস বেলাবার মতলব করছে। কবীর লোকটাকে কাছে ডেকে উপদেশ দিলেন—

“পানি পিয়াওত ক্যা ফিরো
ঘর ঘর সায়র বারি।
তৃষ্ণাবংত যো হোয়গা
পীবৈগা ঝকমারি।”

 এ আয়োজন কেন, ঘরে ঘরে যখন রসের সাগর রয়েছে? তেষ্টা জাগুক, ওর আপনিই সেটা মেটাবার উপায় করে নেবে দায়ে ঠেকে।