পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২৩০
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

সোনা গালাবার মতিটাকে সোনা স্থষ্টি করার উপায় বলে ধরে নেওয়া ! সোনা আপনি তৈরি হয় স্বভাবের নিয়মে, মানুষের হাতে গড়া সোনা সে জাত সোনা নয়—সে কেমিক্যাল সোনা । কাচা সোনার রঙ পায় পিতল, কিন্তু সোনার গুণ তাতে পৌঁছোয় না হাজার বার সোনা জাতীয় শিক্ষার ছাচে চালেও । পুড়িয়ে পিটিয়ে লোহাকে ইস্পাত করা যায়, পিতলকে ছুরির আকার দেওয়াও চলে কিন্তু ইস্পাতের গুণ পিতলে পৌছোয় না। মানুষ অদ্ভুত কৌশলে লোহাকে বাতাসের উপরে উড়িয়ে দিয়েছে পাখীর মতে, কিন্তু সেই লোহাতে পাখীর প্রাণ পৌছে দেবার সাধ্য মানুষের কোনো যুগে হবে বলে বিশ্বাস করে কি কেউ ? ‘স্বভাবে মূদ্ধণি বততে। চিরাগত কতকগুলো প্রথা ধরে জাতির বা মানুষের মন বুঝে’ মনগড়া শিক্ষালয়ে যে শিক্ষার ব্যবস্থা করা গেল তাকেই বল্লেম জাতীয় শিক্ষা । সার্কাসের জানোয়ারগুলো এক রকমের শিক্ষা পেয়ে প্রায় মানুষের মতো চলা ফেরা বলা-কওয়া করে, কিন্তু সে শিক্ষার মূলে স্বাভাবিকতা নেই। বেরাল স্বভাবের নিয়মে যে জাতীয় শিক্ষা পায় তাতে ইদুর ধরতে মজবুত হয়ে ওঠে, দুধ খেতে শেখে, মুড়ে চুরি করতে শেখে ; প্রাণের দায়ে এ সব স্বাভাবিক শিক্ষার ফলে ঘটে, অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা করে নেয় বেরাল। কিন্তু যে শিক্ষায় বেরাল বসতে শেখে, চৌকিতে যেতে শেখে, টেবিলে বাজাতে শেখে হারমোনিয়াম, সেই মনুষ্যজাতীয় শিক্ষা ষেরালের পক্ষে জাতীয় শিক্ষা বলা যেতে পারে না। জাতীয় শিক্ষা স্বভাব বুঝে যেখানে চল্লো সেখানে ঠিক শিক্ষা হ’ল, আর যেখানে সে শিক্ষা সার্কাসের ঘুরপাক ধরে চল্লো সেখানে জাতি বড় একটা কিছু লাভ করতে পারলে না, সার্কাস বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে তারও কাজ ফুরিয়ে গেল এবং এমন উপায়ও রইলো না যাতে করে সে আবার স্বাভাবিক অবস্থা পেয়ে যায়। আমাদের জাত যদি সেকালের মধ্যে ধরা থাকতো—যেমন বেরাল জাত ধরা আছে এখনো সেই পুরাকালের ষষ্ঠীমাতার পায়ের কাছে, তবে কোন রকম শিক্ষা দিলে এদেশের কলাবিদ্যার পুনরাবির্ভাব হতে পারে এ সব কথা ভাববার অবসরই হ’ত না। কিন্তু মানুষজাত যে