পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জাতি ও শিল্প
২৩৩

আমি বলিনে। জাতীয় জীবনের পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী, কেউ তাকে ঠেকাতে পারে না, কালের উপযোগিতার নিয়ম মেনে তবে বাঁচে জাত। আর্য জাতি এককালে ছিল আমমাংসভোজী, তারপর খেতে সুরু করলে আমানি, এবং এখন খাচ্ছে আম আমানি দুই-ই,—একই জাত শুধু কালের পরিবর্তনের মধ্যে পড়ে ভিন্ন চেহারা ধরছে। এটার জন্যে ভাবনা নেই, শুধু ভাববার বিষয় এই যে, জাতটির জীবনীশক্তির দৌড় বাড়ের দিকে না তার উল্টে দিকে। আজ যদি কেউ আমাকে বলে হবিষ্যান্ন ধরলেই তুমি ঠিক তোমার আগেকার তাদের শিল্পকলায় বিশুদ্ধি ইত্যাদি সমস্তই পেয়ে য়াবে, বিশুদ্ধ সঙ্গীত বিশুদ্ধ কবিতা বিশুদ্ধ সাহিত্য এবং বিশুদ্ধ কর্মকাণ্ড সমস্তই এসে যাবে দেশ ও জাতির কবলে, তবে তাকে এই কথাই তো বলবো যে, কালকের মতো হ’য়ে পড়ার জন্য মাতুলী ধারণ করে’ নিতে ব্যস্ত হ’য়ে লাভ কি? সেকালের রক্ষাকবচ একালের জীবনসংগ্রামে তো কাযের হবে না, সেকাল রাখলে যে একাল যায় তার কি? নদীর জাত বাঁচাতে গিয়ে নদীর চলাচল বন্ধ করায় কোন লাভ? চীনদেশ ভোজন-বিলাসী, তারা তিন শত বছরের হাঁসের ডিম খেয়ে রসনা তৃপ্ত করে, কিন্তু তা খেয়ে প্রাচীন চীনের শিল্প-সম্পদ পাবে বলে’ তারা বিশ্বাস করে না একেবারেই—সখ হয় তাই খায়, সুস্বাদু বলে।

 পুরোনো চাল ভাল, পুরোনো শাল ভাল, পুরোনো কাঁথা তাও ভাল, সকল ভাল জিনিষের ভাণ্ডার বলতে পারো আমাদের প্রাচীন আমলকে, তথাপি পুরোনো হ’য়ে যাওয়া যে ভাল এ কথা তো কেউ বলছে না আমরা ছাড়া!

 আজকের কালে প্রাচীন শিল্পের আদর যথেষ্ট দেখে’ আমরা দলে দলে কেউ বৌদ্ধ যুগের মতো কেউ মোগল আমলের মতো ছবি মূর্তি গানবাজনা ইত্যাদি করতে বসি; শুধু এই নয়, পুরাণের পাতা থেকেই কেবল ছবি মূর্তি হাব ভাব ইত্যাদিও হুবহু নিয়ে কায করতে লেগে যাই। ত। হ’লেই বা কি হবে? এই ভাবে সাময়িক আদর বা অনাদরের বিচার করে’ চলায় ব্যবসার বুদ্ধি বৃদ্ধি পায় কিন্তু এতে করে’ রসবোধ জাগে না জাতির অন্তরে এবং জাতিটাও এতে করে’ নিজের শিল্প-সম্পদ পেয়ে ধন্য হ’য়ে যায় না।

 জাতিটাকে যখন চৌরঙ্গীবাতে ধরলে তখন তার হাতে পায়ে বুকে