পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২৪২
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

সত্যই যে দান দাতাকে ভুলিয়ে দেয় সেই তো বড় দান, যে দান ঠেলে দাতা আপনি এগিয়ে আসেন সে দান তো তুচ্ছ দান। রূপদক্ষতার চরম তো সেইখানে যেখানে রচনার রূপ রঙ সমস্তই ভুলিয়ে দিলে রূপদক্ষকে, শুধু তার দান করা রূপের মাধুরী মনকে পরিপূর্ণ করলে। ছবির কবিতার সঙ্গীতের উদ্দেশ্য রচয়িতাকে সুপরিচিত করা—এ হতেই পারে না। রচয়িতা যেখানে গোপন, রূপদক্ষের পূর্ণ দক্ষত সেখানে। ছবির সঙ্গে আর্টিষ্টকে জানছি এ নয়, আর্টিষ্টকে জানলেম না শুধু জানলেম রচনাকে এবং পেলেম তা থেকে মাধুরী যা পাবার তা—এই হ’ল ঠিক ভাবে রূপের উপভোগ। কিন্তু এ না হ’য়ে ছবি নিয়ে কবিতা নিয়ে সঙ্গীত নিয়ে উণ্টে পাণ্টে দেখতে চল্লেম কোথায় তার মধ্যে আধ্যাত্মিকতা দার্শনিকতা প্রভৃতি নানা তত্ত্বের সিংহাসনে আর্টিষ্ট বসে আছেন—এতে রূপকে কোন দিক দিয়ে দেখা শোনা কিছুই হ’ল না । ভোলাতেই রূপের স্বষ্টি হয়েছে যখন, তখন রূপকে অতিক্রম করে অরূপ প্রভৃতির সন্ধান কতকটা যেন বরকস্তার যুগল মূর্তির সামনে বসে দুজনের কুলপঞ্জী এবং তাদের আয়-ব্যয় ও ধমকমের হিসেব দেখে খুসি হয়ে যাওয়ারমতে কায । মধুভরা আকাশে বাতাসে আলোর মধ্যে ফুলের কুঁড়ি প্রাণের পাত্র খুলে ধরলে, মধু সঞ্চিত হ’ল সেখানে, তেমনি রূপদক্ষ রচনার সামনে হৃদয় পেতে দিলেন, মধুতে পরিপূর্ণ হ’ল পাত্র-রূপের সবখানি এতেই পাওয়া হ’য়ে গেল। এট। কবিকল্পনা নয়, সৃষ্টির রূপের রহস্য এই নিয়ে এবং এই নিয়ে আর সব জীবের চেয়ে মানুষ আমরা বড় হলেম—‘অমৃতস্ত পুত্রাঃ । বর্ষার আকাশ জলই ঝরায় তাদের কাছে যারা মেঘের পিছনে মেঘবাহন ইন্দ্র নয়তো মেঘনাদ নয়তো বৃষ্টিতত্ত্ব গোছের একটা কিছু দেখার চেষ্টা করে, আর সেই মেঘ অমৃত বর্ষণ করে তার প্রাণে যে মেঘের রূপ দেখেই ভুলে থাকে, কার দেওয়া মেঘ কোথাকার মেঘ কি দরের মেঘ এ সব খোজই নেয় না । মধুকরের সঙ্গে রূপদক্ষের তুলনা দেওয়া হয় কখনো কখনে, কিন্তু রূপদক্ষ ফুলের মাধুরী ফুলের রূপের সঙ্গে পায়, মধুকর শুধু পায় ফুলের মধু, ফুলকে পায় না। রূপের মধ্যে মধুকর ছাকা অরূপ রস পেয়ে বঞ্চিত হ’ল, আর রূপদক্ষ মানুষ রূপে রসে সমান অধিকার পেয়ে চরিতার্থ হ’য়ে গেল ।