পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
শিল্পে অধিকার
১৯

 কাজের জগতের মোটা-মোটা লোহার শিক দেওয়া ভয়ঙ্কর অথচ সত্যিকার এই বেড়াজাল শুধু আমাদের ধরে চাপন দিচ্ছে না, সব মানুষই এতে বাঁধা। আখের ছড় বলে এর শিকগুলোতে ভুল করে দাঁত বসানো তো চলে না। কাজের মধ্যে যদি ধরা না দিই তো সংসার চলে না, আবার কাজেই গা ঢেলে দি তো রস পাওয়া থাকে দূরে। এর উপায় কিছু আছে?

 রস পেতে চাই,—তবে কি রসের মধ্যে নিজেকে, নিজের সঙ্গে কাজকর্ম সংসারটা ভাসিয়ে দেবো? ফুলের গন্ধে মাতোয়ারা মন, তবে কি ফুলের বাগিচায় গিয়ে বাস করবো?—ধানের ক্ষেত, ধনের চিন্তা সব ছেড়ে? কবীর বল্লেন, পাগল নাকি!

“বাগো না জায়ে নাজা,
তেরে কায়া মে গুলজার॥”

‘ও বাগে যেওনা বন্ধু, পুষ্পবন তোমার অন্তরেই বিদ্যমান!’ কায়ার মধ্যে প্রাণ যে ধরা রয়েছে, বাইরে থাক্‌ না কাজের জঞ্জাল। খাঁচার মধ্যে থেকেই পাখী কি গান গায় না? তাকে কি ফুলের বনে যেতে হয় গান গাইতে? যে ওস্তাদ সে ঘানি চলার তালে তালেই গায়, নাই হলো আর কোনো সংগত-সুযোগ।

“মৃগা পাশ কস্তুরী বাস
আপন খোজৈ খোজৈ ঘাস।”

কিন্তু কস্তুরীর ব্যবসা করতে গিয়ে দানা পানির উপায় ছাড়লে জীবনটা যখন শুকিয়ে যাবে তখন কি করা যাবে? কোথায় থাকবে তখন রস, কোথায় থাকবে তখন শিল্প? রস না থাক, জীবনটা তে। রয়েছে অনেকখানি। আগে জীবন—সব রসের মূল যেটা, সেটা তো রক্ষা করা চাই। এর উপর আর কথা চলে না। কিন্তু এই কালে সহরের বুকে দাঁড়িয়ে ঐ ফুটপাতের পাথরের চাপনে বাঁধা পড়ে শিরীষ গাছ, সেও যদি ফুল ফোটাতে পারে, তো মানুষ পারবে না তেমন করে ফুটতে—এও কি কখনো সম্ভব? চেরি ফুল যখন ফোটে তখন সারা জাপানের লোকের মন—সেও ফুটে উঠে, ছুটি নিয়ে ছুট্ দেয় সেদিকে সব কাজ ফেলে। কই তাতে তো কেউ তাদের অকেজো বলতে সাহস করছে না? পেটও তো তাদের যথেষ্ট ভরছে। আমাদেরও তো আগে