পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অরূপ না রূপ S1 ○ মধ্যে তলিয়ে যাচ্ছে আবার আলোর মধ্যে জেগে উঠছে--এ ছটি ছবিই রূপের মুনির্দিষ্ট সীমা কোন দিন অতিক্রম করে চলছে না। কুয়াস এখানে রূপ আবরণ করছে না, একটা রূপ থেকে আর একটা রূপ ফোটাচ্ছে—পাথরের কড়ি স্বর মেঘের কোমল থেকে কোমলতর স্বরে মিলে’ আর একটা নতুন সুরে পরিণত হ’তে চলেছে, রূপ রঙ এদের ছন্দে বিচ্ছেদ ফাক টেনে দিচ্ছেন, প্রলয় দিচ্ছে না টেনে চোখের এবং মনের উপরে মাধুর্যহীন নীরস নিকষ-প্রলেপ । রূপকে নষ্ট করে’ অরূপের স্বাদ দেওয়া রূপদক্ষের কায নয়। পাথরের মূর্তি রঙ বাদ দিলে অথচ রঙের স্বপ্ন ধরে রইলো, সেই মৃতিকে পুড়িয়ে এবং গুড়িয়ে চূর্ণ কর তাতে মূর্তিতে যা ছিল তা নেই। তেমনি সুন্দর পটখানি চূণের প্রলেপ দিয়ে সাদা করে দিই, কোথায় যায় ছবির রূপ কোথায় বা রঙ, কিন্তু সুন্দর দৃষ্ঠের উপরে রাত্রির কুয়াস পড়ক সে এক নিরুপম রূপ পায় দৃশুটি । ছবির গায়ের চুণের প্রলেপ, রূপের রহস্য তাতে নাই। পর্বত ঢেকে কুয়াসার প্রলেপ—সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত তার দিকে চেয়ে চেয়ে চোখ এবং মন বসে থাকতো, কিন্তু কোনদিন দেখলে না সে রূপ নেই রঙ নেই, কেবলি দেখলে রঙ ভোলানো রঙ, রূপ ভোলানো রূপ এসে মিল্লো রূপের পাশে রঙের পাশে ! বুদ্ধ,দ ফেটে গেল, রূপ মিলিয়ে গেল, রঙ মুছে গেল—এ ঘটনা নিয়ে গভীর তত্ত্বকথা লেখা চল্লো, আধ্যাত্মিক দেহতত্ত্বের কবিতা ও গান লেখা চল্লো, কিন্তু ছবি লেখা চল্লো না । ক্ষণভঙ্গুর রূপ মিলোতে চাচ্ছে, রূপ-হারানো অকুলের কিনারায় রূপ রঙে ভরে উঠে বুকের বেদনায় কঁপিছে—এটা ছবির বিষয় হ’ল । মানুষ যদি কেবল চোখ নিয়েই চারিদিকের রূপ সমস্ত দেখতে তবে ফটোগ্রাফের ক্যামেরা যে ভাবে দেখে সেইভাবে তুলতে কেবলি রূপের ছাপ—ছবি নয়—শুধু দেখতে রূপ আর রূপ। জলের উপর তেল যে ভাবে ভাসে দৃষ্টি সেইভাবে পিছনে চলতো, দৃষ্টি রূপের গভীরতা অনুভব করতেই পারতো না মানুষ যদি তার চোখের সঙ্গে মন নিয়ে না দেখতে চেয়ে । চোখের দেখা রূপের বাইরে দৃষ্টির স্পর্শ দিয়ে ক্ষান্ত হয়, মনের দেখা রূপের মধ্যে যে রস তাকে পেতে চলে চোখ মন দুই মিলে, তবে দেখায় রূপের মাধুরীখানি ।