পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২৬৬
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

যে আমীর খসরু কি আর কেউ এটার আবিষ্কত। তারপর যদি প্রশ্ন কর, কল্যাণ । কোথা থেকে এল, শুনবে মহাদেবের কাছ থেকে, নয়তো নারদের কাছ থেকে বা ভরত মুনির কাছ থেকে। এ ভাবের চর্চাকে রূপবিদ্যার দিক দিয়ে চর্চা বলে না। কল্যাণ মুর কি ইমন সুর এদের সঙ্গে যুগ যুগ ধরে মানুষের কি ভাবে কোথায় কোথায় পরিচয় তা জানতে সাত বারের বেশি পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে আসতে হবে, রূপবিদ্যার প্রদর্শিত পথ ধরে কত মানুষ কত সভ্যতা অসভ্যতার কোঠায় কোঠায় সদ্ধান করতে হবে, তবে পাওয়া যাবে সঠিক খবর ইমন কল্যাণের। মনে হয় শুনলে, এই ভাবে সব জিনিষের চর্চা করে চলা শক্ত ব্যাপার। কিন্তু ইউরোপের মানুষ—তারা তো চলেছে এইভাবে, তার তো মাটির তলা থেকে পৃথিবীর সৃষ্টিতত্ত্বের এক একখানি পাতা এক এক অধ্যায় উঠিয়ে নিয়ে সম্পূর্ণ করছে পৃথিবীর জন্ম থেকে আজ পর্যন্ত তার রূপের নানা পবিবতনের ইতিহাস—উপন্যাসের মতোই যা মনোহর, রূপকথার মতোই যা অদ্ভুত । রূপবিদ্যা মানুষকে বিষয়টির সত্যে পৌঁছে দিতে চায়। যার কাছে রেখার সত্য রঙের সত্য স্বরের সত্য ছন্দের সত্য ধরা রইলো না, সে ছবিই বা জানবে কি, গানই বা গাইবে কি, কবিতাই বা লিখবে কি এবং এদের ইতিহাসই বা বুঝবে কি ! একটা সোজা কসির মধ্যে প্রাণ কি অনিমেষভাবে জ্বলছে, একটা তরঙ্গিত রেখার প্রাণশক্তি কি উচ্ছ্বাস নিয়ে প্রকাশ পাচ্ছে, আর একটা দপ্তরীর টানা রেখায় প্রাণ কি ভাবে নিষ্পেষিত হ’য়ে গেছে,—রূপবিদ্যার সাহায্য ছাড়া এ কেমন করে জানা হবে । সুরের অভিমতে সমস্ত কি রূপ ধরছে, ছন্দের দোলা সব কেমন ভঙ্গি ধরে ধরে নৃত্য করে চলেছে রূপবিদ্যা দখল না হ’লে কে তা বুঝবে ! বাতাস ঝড়ের উন্মাদ রূপ ধরে আসে, বাতাস বসন্তের ছন্দ ধরে : বয়, বাতাস শীতের শিহরণ দিয়ে দিয়ে চলে, জলে স্থলে আকাশে তার রূপ নিরূপিত হয়ে যায়, মেঘের বিস্তারে ফুলের ছন্দে জলের কম্পনে ধরা থাকে তার কথা সুর রূপ ভাব ভঙ্গি সমস্তই—রপিবিদ্যার জ্ঞান যার নেই সে দেখে সব শোনে সব অবাক হ’য়ে, দেখাতে পারে না শোনাতে পারে না বলতে পারে না কিছুই ।