পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
রূপবিদ্যা
২৬৯

রইলো, রূপবিদ্যা দিয়ে সে খবর না নিলে কোন উপায় নেই। সেদিক দিয়ে দেখি তাজমহল তো শুধু একটা বাড়ী মাত্র নয়, কবর মাত্র নয়, সে একটা কবিতা—মানুষের ভাষারূপ জগতের একটা যুগচিহ্ন, প্রতিভার আকাশ-প্রদীপ, হিন্দু-মুসলমান দুই সভ্যতার উৎকর্ষের পরিণয়ের সাক্ষী, এবং দেখি তার ইতিহাস ঈজিপ্টের পিরামিড, জগন্নাথের রথ, বৌদ্ধস্তৃপ এবং যুগ-যুগান্তরের মানুষের প্রতিভা দিয়ে রচনা করা সমস্ত স্মৃতিমন্দির এবং স্মরণীয় গীত ও কথা র সঙ্গে জড়িয়ে আছে নিবিড় ভাবে । চার মিনারের মাঝে দেউল, হুই পাশে দুই জওয়াব –পাশ্বদেবতার মাঝে এ কেন চতুভূজ, এ কেন সপ্ততন্ত্রী বীণা ! এই রহস্য রূপবিছা না হ’লে ধরি কোথা থেকে ? রূপের যথার্থ পরিমাপ একমাত্র রূপবিদ্যার দ্বারা হওয়া সম্ভব, আর কোনো বিদ্যা রূপের তল পর্যন্ত পৌছে দিতে পারে না । দপ্তরী সোজা রেখা টেনে যায় বটে কিন্তু রেখার যে রহস্য তার তলতে পায় না কোনো দিন, রূপবিদের কাছে সামান্স ত্যাচড়টিও আপনার জীবনরহস্য ধরে দেয়। রূপবিদ্যা নিয়ে যারাই চর্চা করছে তারাই জানে এতে করে একটা জিনিষের গুণটিও যেমন দোষটি ও তেমনি সুস্পষ্ট হ’য়ে দেখ। দেয় চোখে । - অজন্তা গুহার ছবির সামনে যদি এমনি একজন মান্তয, একজন পুরাতত্ত্ববিদ এবং একজন রূপদক্ষ গিয়ে দাড়ায়, তবে দেখবো ক’জনই বলবে চিত্রগুলো চমৎকার, কিন্তু কেন চমৎকার তার বেলায় ক’জনই আলাদা আলাদা কথা বলবে। সাধারণ মানুষটি কেন যে চমৎকার তা ধরতে পারবে না—সেই ব্যাপারটির সামনে অভিভূত হয়ে থাকবে ; পুরাতত্ত্ববিদ ছবির প্রাচীনতা তার ইতিহাস বিশ্লেষণ করে’ এমনি কতক ইতিহাস কতক কুলপঞ্জী ইত্যাদি মিলিয়ে সুন্দর একটা বক্তৃতা দিয়ে চলবে এবং ঐ সাধারণ মানুষটির মতোই রসও গ্রহণ করবে জিনিষটার ; কিন্তু সত্যি যে রূপদক্ষ সে ছবির খবর সব দিক দিয়ে পাবে । সে শুধু ছবির প্রাচীন ইতিহাস দেখবে না ছবিগুলো চিত্রবিদ্যার কতটা উৎকর্ষ দেখাচ্ছে সেটাও দেখবে । এক কথায় সে দেখতে পাবে অজস্তার চিত্ৰ যেন তার সামনে আজ আঁকা হচ্ছে,—কারু হাত নিৰ্ভয়ে রেখা টানছে, কারু হাত ভয়ে কঁপিছে । শুধু এই নয়, এই সব চিত্রের পিছনে মানুষের চিত্রবিদ্যার ধারা কত যুগ