প্রত্যেক রূপের সঙ্গে রূপের ডৌলটি কতকগুলি রেখা দিয়ে সুনির্দিষ্ট আকারে আমাদের চোখে পড়ে এবং তাই দিয়ে আমরা বুঝি এটি এ, ওটি তা। ইনি অমুক তিনি অমুক এটা মানুষের মুখ না দেখেও খুব দূরে থেকে চিনি, মানুষটি যে কে তা বুঝি এই সমস্ত রেখা দিয়ে যা তার রূপের সঙ্গে এক হ’য়ে আছে। রঙ্গমঞ্চের উপরে যখন মানুষটিকে চড়াতে হ’ল তখন তার নিজের রূপটি নিয়ে বা রূপ-রেখাগুলি নিয়ে কায হ’ল না— অন্ত এক প্রস্থ রেখা দিয়ে তাকে ভিন্ন রূপ করে’ নিতে হ’ল। এখন, যে রূপকার রঙ্গমঞ্চের চরিত্রগুলিকে নির্দিষ্ট রূপ দিয়ে উপযুক্ত ভাবে সাজাবে সে যদি দক্ষ না হয় রূপ-রেখার বিষয়ে, তবে নানা অঘটন উপস্থিত হয় অভিনয়ের রস ফোটাবার কাযে, তেমনি ছবিতে রেখার রহস্য ভেদ করতে যে পারলে না, রূপকে দিয়ে রসও ফোটাতে সে পারলে না; রেখার ঘোরপেঁচ্, দিয়ে সে চমক লাগিয়ে দিলে, হয়তো যে ভাবে তান মানের কর্তব দিয়ে চমক দেয় তথাকথিত কালোয়াত সমস্ত শ্রোতার কান, কিংবা জমকালো সাজগোজ দিয়ে ভুলিয়ে দেয় যাত্রার অধিকারী দর্শকের চোখ —সেই ভাবে বিস্ময় জাগালে; কিন্তু একে রূপদক্ষত। বলা গেল না। রূপদক্ষতা সেইখানে যেখানে রূপে-রেখায় রূপে-ভাবে সুরে-কথায় এবং এক রেখায় অন্ত রেখায় এক রূপে অন্ত রূপে এক সুরে অন্ত সুরে একাত্ম হ’য়ে রস সৃষ্টি করে। রেখা ছাইলো রূপকে, রূপ ছাইলো রেখাকে এমনভাবে যে কেউ কাউকে মারলে না কিন্তু মিল্লো সহজ ছন্দে—তখনি হ’ল রস, না হ’লে বিরস হ’ল ব্যাপারটি।
বর্ষার ধারা সরু রেখা টেনে আকাশ থেকে পড়ে, হঠাৎ দেখে’ মনে হয় একটা আবছায়া, ছবির উপরে হাল্কা রঙের রেখা টেনে বৃষ্টির ছবি সহজেই দেখানো যাবে, কিন্তু আঁকবা মাত্র বুঝি এ বৃষ্টি পড়লো না, রেখার জাল পড়লো ছবির উপরে। পদে পদে ঠেকি কেন এই জলের রেখা টানতে? বৃষ্টিধারী রূপরেখা দিয়ে সৃষ্টি; সেই এক একটি রেখার মধ্যে বর্ষার ছায়া-করা রূপ, জলের ঝরে’ পড়ার সুর, বৃষ্টি থেমে রোদ ফোটার এবং মাঠের সবুজ হ’য়ে ওঠার নানা স্বপ্ন এক হ’য়ে আছে।