পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২৮০
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

হয়েছে এইটুকুমাত্র বোঝাচ্ছে—এই রুলটানা রেখা সমস্ত চাচ্ছে আঁক; বাকী অক্ষর মূর্তির তলায় আপনাকে লুপ্ত করে দিয়ে সার্থক হতে। রূপদক্ষের হাতে টানা রেখা এই ভাবের সার্থক রেখা, বিস্তীর্ণ পটখানির প্রসারের উপরে আকাশের বুকে ধরা চন্দ্র-রেখার মতো—রুপে ভক্তি রেখা। ত্রিপদী চৌপদী নানা ছন্দ আছে যা দিয়ে কবিতার স্বচ্ছন্দ রূপটি বাধা হয়ে থাকে, সকোণ নিষ্কোণ নানা রেখা আছে যা নিয়ে রূপের ছাদ বাধা হয়, সঙ্গীতে টানটোন তাল-লয় ইত্যাদি নানা মাত্রার কসন আছে য; বেঁধে রাখে স্বর ও কথা একত্রে, কিন্তু এই যে কথা বাধা পড়ছে ছন্দে, রূপ বাধা পড়ছে রেখায়, মুর বঁধা যাচ্ছে তানে লয়ে—এদের সবারই দাবী রূপদক্ষের কাছে—ছন্দ যেন নিগড় না হ’য়ে নূপুর কাঞ্চী হ’য়ে বাজতে থাকে, রেখা যেন বেড়ী না হ’য়ে ফুলের মালা হয়ে দোলে, তাল লয় ইত্যাদি যেন ভয়ঙ্কর রকমে ঠিক ঠাক একটা বেতাল হ’য়ে গলা জড়িয়ে না ধরে “তমালতালী বনরাজিনীলা” হয়। কাজল-রেখার টানটোনের বেলাতেও এই কথা । বেহালার ছড়ি যখন খোচ খোচ করে স্বর টানতে থাকে তখন সঙ্গীত কোথায় থাকে ভেবেই পাই না। ছালা তলায় কন্যা বাধা পড়ে বরের সঙ্গে একগাছি রক্ত-সূত্রে কিন্তু কস্তার দাবী থাকে—এই বঁাধন যেন নিগড় হ’য়ে গলার ফঁাসি হ’য়ে তাকে পীড়ন না করে। এমনি রূপ ধরা দেয় রেখার বঁধুনীর মধ্যে কিন্তু রূপের দাবী থাকে রেখার কাছে—রেখার বাধুনী যেন রূপকে পরিখার মতো ঘিরে না বন্দী করে, মেখলার মতে, নুপুরের মতে, কাজলের মতো, কুল উপকূলের মতো রেখা যেন রূপের সহচারিণী সহধর্মিণী হ’য়ে স্বরের ছন্দে বাধা বীণার ঝকঝকে তারের মতো বাজতে থাকে, রূপের সঙ্গে এক হয়ে থাকে যেন রেখা, এককে না মারে অন্তে, রূপ ও রেখা স্থজনের সত্ত। এক হ’য়ে যেন রস জাগায় । রূপদক্ষের হাতে টানা রেখা আর খবরের কাগজে যে সব সচিত্র বিজ্ঞাপন বার হয় তার রেখা—দুয়ের তফাৎ এইটুকু নিয়ে যে রূপদক্ষের রেখা সে রূপ-রেখা, সেখানে রেখা রূপ রঙ সমস্তই এক ‘ হয়ে আছে, কালীঘাটে পটে টানা রেখা সেখানেও এই হিসেব ; কিন্তু বায়স্কোপের দরজায় যে সচিত্র মস্ত মস্ত বিজ্ঞাপন, মাসিক পত্রের মলাটে যে রঙ্গীন আবরণ—সেখানে রেখা রূপ রঙ সবই আলাদা আলাদা বর্তমান।