পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
শিল্পে অধিকার
২৩

এই ইচ্ছেটাই যা পেতে চাই তাই পাওয়ায়, পথ দেখায় এই ইচ্ছে। নজর বিগড়ে গেছে আমাদের, না হলে শিল্পের আগাগোড়া—তার পাবার শুলুক-সন্ধান সমস্তই চোখে পড়তো আমাদের। কি চোখে চাইলেম, কিসের পানে চাইলেম, চোখ কি দেখ্‌লে এবং মন কি চাইলে, চোখ কেমন করে দেখ্‌লে, মন কেমন ভাবে চাইলে, চোখ দেখলেই কি না, মন চাইলেই কি না—এরি উপরে পাওয়া-না-পাওয়া, কি পাওয়া, কেমন পাওয়া, সবই নির্ভর করছে।

 কাজের উপরে জাতক্রোধ রক্তচক্ষু নিয়ে নয়, সহজ চোখ, সহজ দৃষ্টি—এবং সেটি নিজের,—সহজ ইচ্ছা এবং আন্তরিক ইচ্ছা—এই নিয়ে ‘নিয়তিকৃত-নিয়মরহিতা’, হ্লাদৈকময়ী, অনন্যপরতন্ত্রা, নবরসরুচিরা যিনি, তাঁর সঙ্গে শুভ দৃষ্টি করতে হয় সহজে। রসের পেয়ালার যদি নাগাল পাওয়া গেল তখন আর কিসের অপেক্ষা? যতটুকু অবসর হোক না কেন তাই ভরিয়ে নিলেম রসে, যেমনি কাজ হোক না কেন তাই করে গেলেম—সুন্দর করে’ আনন্দের সঙ্গে; যা বল্লেম, কইলেম, লিখলেম, পড়লেম, শুনলেম, শোনালেম—সবার মধ্যে রস এলো, সৌরভ এলো, সুষমা দেখা দিলে;—শিল্প ও রস শুকশারীর মতো বক্ষ-পিঞ্জরে চিরকালের মতো এসে বাসা বাঁধলো। কি কবি, কি শিল্পী, কিবা তুমি, কিবা আমি এই বিরাট সৃষ্টির মধ্যে যেদিন অতিথি হলেম, রসের পূর্ণপাত্র তো কারু সঙ্গে ছিল না; একেবারে খালি পাত্রই নিয়ে এলেম, এলো কেবল সঙ্গের সাথী হয়ে একটুখানি পিপাসা। আমরা না জানতে মাতৃস্নেহে ভরে গেল আসবাব পত্র—সেই এতটুকু পেয়ালা আমাদের, তারপর থেকে সেই আমাদের ছোট পেয়ালা—তাকে ভরে দিতে কালে-কালে, পলে-পলে দিনে-রাতে, এক ঋতু থেকে আর এক ঋতু রসের ধারা ঝরেই চল্লো, তার তো বিরাম দেখা গেল না;—শুধু কেউ ভরিয়ে নিয়ে বসে রইলেম নিজের পেয়ালা বেশ কাজের সামগ্রী দিয়ে নিরেট করে, কেউ বা ভরলেম পরে সেটা নব-নব রসে প্রত্যেক বারেই পেয়ালাটাকে খালি করে-করে। এই কারণে আমরা মনে করি সৃষ্টিকর্তা কোন মানুষকে করে পাঠালেন রসের সম্পূর্ণ অধিকারী, কাউকে পাঠালেন একেবারে নিঃস্ব করে। একি কখন হতে পারে? “রসো বৈ সঃ” বলে যাঁকে ঋষিরা ডাকলেন, তিনি কি বঞ্চক? রাজার মতো কাউকে দিলেন ক্ষমতা, কাউকে রাখলেন অক্ষম করে,