পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
স্মৃতি ও শক্তি

“অন্তর বজে তো যন্তর বজে”। মনে বাজলে যে সুর যে রূপ তারি ছন্দ ছাদ পেয়ে যন্ত্রীর যন্ত্র বাজলো, রাগ রাগিণীর রঙ ও রূপ ধরে । অহোরাত্ৰ মনে রাখা অথবা না রাখার ক্রিয় চলেছে আমাদের মধ্যে। এখানে একটা লাইব্রেরী তো আছে, তার বইয়ের সংখ্যা কত কেবল লাইব্রেরিয়ান জানেন, হয়তো দপ্তর সেও শুনে শুনে মুখস্থ করে নিয়েছে। এই যেমন বইগুলোর সংখ্যার সঙ্গে পরিচয় আর যেমন তাদের বিষয় নাম ইত্যাদি, তাদের রাখার স্থানের হিসেব ইত্যাদিরও মোটামুটি আন্দাজ—সেই ভাবের পরিচয় নানা রূপের সঙ্গে মানুষ করে চলে সারা জীবন ধরে । কিছুর সঙ্গে পরিচয় ঘনিষ্ঠ ভাবে হ’ল, স্মৃতি রইলো মনে ধরা পরিষ্কার কি আবছায়া কিংবা জলের রেখার মতো অস্থায়িভাবে । আনন্দের ব্যাপার, দুঃখের ব্যাপার, কাযের ব্যাপার, এবং নানা বাজে ব্যাপার নিয়ে একরাশ স্মৃতি—যেন নানা বিষয়ের বই একটা লাইব্রেরীতে। এর মধ্যে কতকগুলো ব্যাপার বিজ্ঞাপন নোটিস দৈনিক ঘটনার সঙ্গে মনের একটা কোণে জমা হ’তে থাকলো, কতক চিরকুট কাগজের মতে যেমন এল তেমনি গেল, ধরা রইলো না মনের ফাইলে গাথা হয়ে। এমন লোক যথেষ্ট দেখতে পাওয়া যায় যারা খুব চেনা মানুষের ছবি দেখেও মোটেই ধরতে পারে না ছবিটা কণর । আঁকা ছবির কথা ছেড়ে দিই, ধর জগন্নাথের মন্দিরের একটা ফটোগ্রাফ,—একজন যে শ্ৰীক্ষেত্র করে এসেছে তাকে ফটোখানা দেখাও, বুঝতেই পারবে না সে দৃশ্বট কোথাকার, সেটা যে একটা স্থানের চিত্র এ বিষয়টাও বোঝে ন, একটা হেঁয়ালীর মতো ঠেকে তার কাছে চিত্র মাত্রেই। গাছ দেখে? যে বলতে পারে গাছ, সে গাছের ছবিকে দেখে’ গাছই যে বলবে এমন কথা নেই। ছবি দেখতে অভ্যস্ত নয় এমন চোখের পরীক্ষা ঘরের দাসী চাকর বেহার এমন কি ভদ্রলোকদেরও অনেককে নিয়ে করে দেখতে পারে। এই তো গেল সহজ দেখার বেলায়, তারপর নিরীক্ষণ করে দেখা, মন দিয়ে দেখl, ভালবেসে দেখা ইত্যাদি নানা রকম দেখার হিসেব আছে যা অনেকের কাছে একেবারেই ধরা নেই।