আর্যশিল্পের ক্রম
দেখা যায় যে আর্য অনার্য নির্বিশেষে এক সময়ে তাবৎ মানুষই নানা দেবতার কল্পনা ও উপাসনা করছে প্রাতঃসূর্য মধ্যাহ্নসূর্য অস্তমান সূর্য আকাশ অগ্নি গাছ পাথর ইত্যাদি ইত্যাদি। বৈদিক যুগেও আরণ্যক ঋষিরা দেখছি এই সকল ভিন্ন ভিন্ন দেবতার কল্পনা করে’ নানা মন্ত্র উচ্চারণ করেছেন এবং কোথাও কোথাও এই সব দেবতার মন্ত্রমূর্তি গড়ে তোলারও লক্ষণ দেখি —যেমন ঊষাকে ভাষা দিয়ে একটি কুমারী মূর্তিতে ধরা হ’ল, যেমন সূর্যকে তিন বর্ণের তিন মূর্তি দেওয়া হ’ল, অগ্নিকে দেখা হ’ল যজমানের কামনাবাহী দূতরূপে। এইভাবে তাবৎ দেবতা একটি একটি স্বনির্দিষ্ট ধ্যানমূর্তি পেতে পেতে চল্লো আস্তে আস্তে। মানুষের কাছে অগ্নিদেব যূপকাষ্ঠ এরা প্রত্যক্ষ রূপ পেয়ে গেল, বৈদিক আমলে ঋষিরা নানা কোণবিশিষ্ট বেদীর মধ্যে অগ্নিকে ধরে’ এবং যূপ ও ইন্দ্রধ্বজকে নানা বর্ণের পুষ্পমালা চামর ইত্যাদিতে সাজিয়ে ধরলেন। ভারতবাসী আর্যগণের সঙ্গে এই বৈদিক যুগে ভারতের বাহিরে আর্য ও অন্যব্রতগণের দেবতার রূপকল্পনা ও রূপপ্রদানের মধ্যে একটা চমৎকার সাদৃশ্য রয়েছে দেখা যায়। ভারতের ঋষিদের কল্পিত ইন্দ্রকে আমরা নানা নামে নানা উপাখ্যানের মধ্যে খুঁজে পাই খুব আদিম মনুষ্যসমাজের মধ্যেও, এ ছাড়া দেবশিল্পী আছেন যিনি নানা অস্ত্রশস্ত্র ইত্যাদি গড়েন। বেদে ত্বষ্টা এবং ঋভুগণ শিল্পী বলে’ কথিত হচ্ছেন—“যাঁহারা অশ্বিদ্বয়কে রথ নির্মাণ করেন, যাঁহারা অসংত্রা কবচ নির্মাণ করেন” ইত্যাদি নানা কারিগরির কথা। কারিগরের হাতের কাযের প্রশংসা এবং কারিগরকে সম্মান দেওয়া হয়েছে বারে বারে বৈদিক যুগে।
(১) “হে বলের পুত্র, সুধন্বার পুত্র, ঋভুগণ তোমরা এখানে আগমন কর, তোমরা অপগত হইও না। এই সবনে মদকর সোম রত্নদাতা ইন্দ্রের পরেই তোমাদের নিকট গমন করুক।”
(২) “ঋভুগণের রত্নদাম আমাদের নিকট এই যজ্ঞে আগমন করুক। যেহেতু তাঁহারা শোভন হস্তব্যাপার দ্বারা ও কর্মের ইচ্ছা দ্বারা এক চমসকে চতুর্ধা করিয়াছিলেন এবং অভিযুত সোম পান করিয়াছিলেন।”