পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৩৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৩৪৪
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

সমান ডৌল সে সমপরিমাণ না হ’লে হয় না। স্বভাবের নিয়মে সমান সমপরিমাণ দুটো গাছ নেই। জগতে দুটো মানুষ সমান নয়, ' এমন কি হাত পা চোখ কান সেখানেও সমান মাপ দেখা যায় না। স্বভাবের গড়ন সমস্ত হ’ল অসম বিষম ছন্দে প্রস্তুত—সবার স্বতন্ত্র মাপ। বিশ্বশিল্পীর রূপ-স্মৃষ্টির ধারা চল্লেী অসম বিষম ছন্দে ও তালে। রূপের বৈচিত্র্য রসের বৈচিত্র্য এই লক্ষ্য ধরে গড়লেন বিশ্বকমা, একের সমান আরেক নেই, নিজস্ব মান পরিমাণ নিয়ে সবাই সেখানে রূপবান এবং পরম্ব প্রমাণ ধরে সবাই সেখানে কেউ ছোট কেউ বড়, কেউ দূরে কেউ নিকটে, এমনি নানা আকার প্রকারের হ’ল। কাছের বন সবুজ, দূরের বন নীল রূপ। কাছের তালগাছ দেখায় বড়, দূরের তালগাছ দেখতে ছোট। মানুষের পাশে কুকুরটি ছোট কিন্তু খরগোশের পাশে সে মস্ত বড়—পরস্ব প্রমাণ বলে। কেবল যা প্রতিবিম্ব প্রতিচ্ছবি সে ডোলে মাপে সমানের নিয়ম ধরলে, কিন্তু সেখানেও ভেদ রইলো দুয়ে—জলে পড়লে প্রতিবিম্ব, ফুলের সব দিক দিয়ে দুটো ছুটে এক হ’য়েও হ’ল না— সত্য ফুলকে তোলা গেল, ফুলের প্রতিবিম্বটি তোলা গেল না, ফুলে রইলো সৌরভ, প্রতিবিম্বে রইলো—ন মধু না সৌরভ। “God created man in His own image.” forsto fifi, বিশ্বরূপের কত বিশ্বকম। যিনি, তিনি —“স্বয়ংরূপ দর্পণে ধরে মানবরূপ সৃষ্টি করেছেন” (—লালন ফকির) ; “যথাদর্শে তথাত্মনি”। বিশ্বকমণ তিনি স্বয়ংরূপ, তার কৃত যা কিছু তাদেরও স্বয়ংরূপ দিলেন তিনি। রূপসাধকের মনের দর্পণে ঠিক ঠিক প্রতিবিম্ব হয় রূপ এটা সুনিশ্চিত, কিন্তু সেই রূপই বাইরে প্রকাশ করলেন যখন সাধক তখন যেমনটি তেমনটি করে দেওয়া সম্ভব হ’ল না তার পক্ষে। কাচের দর্পণে প্রতিবিম্ব পড়ে কিন্তু সেই রূপের ভোগ নেই দর্পণের। আত্মার দর্পণে রূপের ভোগ হচ্ছে, ক্রিয়া চলেছে আত্মার । জলের ক্রিয়া আরম্ভ হওয়া মাত্রেই স্থির । চন্দ্রবিম্ব যেমন ভেঙে হয় চাদমালা, তেমনি স্বয়ংরূপ সমস্ত প্রতিবিম্ব ফেল্পে আত্মার দর্পণে, আবার আত্মার ক্রিয়া তাদের দিলে স্বতন্ত্র ডেল মাপ। যেমন পাই ভিজে কাদায় পায়ের ছাপ তেমনি ক্যামেরায় সমানকে পেলেম—কতকটা সঠিক স্বয়ংরূপের পুনরাবৃত্তি পেলেম একের মতো আর এক, কিন্তু তবু সেটিকে স্বয়ংরূপ বলা গেল না, কারণ, অনেক