যথেষ্ট গুণপন প্রকাশ হ’ল তার, কিন্তু ভাবুকতা প্রকাশ করলে দলীল লিখতে উকিল এ বল্লে তার ওকালতী বুদ্ধিকে খাটো করা হয়; তেমনি “কৃষ্ণকান্তের উইল”—সেখানে বঙ্কিমবাবু তাঁর ওকালতী বুদ্ধি খাটিয়েছেন ভাবুকতা নয় বল্লে মুস্কিল। কুবেরের ছিল হিসেবি বুদ্ধি, তিনি ভাবতেন ধনের হিসেব, আর কুবেরের অনুচর যক্ষরাজের ছিল রসবোধ, হিসেবি-বুদ্ধি একটুও নয়, সে বলে’ হিসেবের খাতায় অঙ্ক ন কসে’ এঁকেই চল্লো প্রিয়ার ছবি—এ ওর ভাব বুঝলে না, এক বছরের জন্য সস্পেণ্ড হ’লেন যক্ষরাজ। এই এক বছরে বুদ্ধির জোরে তবিলের ফাঁক পূর্ণ হ’ল ধনপতির, আর বিরহী যক্ষের বুক ভাবসম্পদে ভরে’ উঠলো দিনে দিনে। যক্ষ যদি বুদ্ধি খাটাতে চলতে তো মেঘকে দিয়ে ডাক-পেয়াদার কাজ করাতে চলতো না, সে ভাবুক ছিল তাই নির্ভাবনায় মেঘকে দূতের পদে বরণ করে নিয়েছিল। মেট্রোলজির রিপোর্ট বুদ্ধিমানে লেখে, আর ভাবুকে লেখে মেঘদূতম্।
কেল্লায় তোপ পড়লো—রাত নটা বাজলো এই জ্ঞান জন্মে’ দিয়ে চুকলো তার কাজ, রাত্রির যে ভাবটি সেটি মনে পৌঁছে দেওয়া হ’ল না তোপের শব্দে, তোপ জানান দিলে মাত্র প্রহর। সন্ধ্যায় আরতির ঘণ্টাধ্বনি—সে শুধু জানালে না আরতির বেলা হয়েছে, গির্জের ঘণ্টা— সে শুধু জানালে না এত প্রহর হয়েছে, বিয়ের বাঁশী—সে শুধু জানালে না লগ্ন আর সময়টা; ভাবযুক্ত ধ্বনি এরা, রসের সংবাদ দিয়ে গেল সবাই ভাবের সঙ্গে মিলন ঘটিয়ে। শাস্ত্রকার বলেছেন, রস ছেড়ে ভাব নেই, ভাব ছেড়ে রস নেই। ধর সখ্যরস—ভাব হ’ল দুই ছেলেতে তবে রস জাগলো মনে মনে। এমনি ছেলেতে ছেলেতে ঝগড়া—সেখানে দুই বিপরীতমুখী ভাবের ধাক্কা জাগালে আর এক রকম রস। আবার কোথাও কিছু নেই হঠাৎ মনে একটা ভাব জাগলো, রসও বিঁধলো প্রাণে সেই সঙ্গে। অহেতুক ভাবের উদয়ে কোথাও কিছু নেই হঠাৎ একটা সুর মনের মধ্যে গুণগুনিয়ে ওঠে, একটা ছন্দ দোল খেতে লাগে প্রাণের দোলায়, রঙের একটা নেশা উপস্থিত হয়, চোখে—কারণ সন্ধান করে’ পাইনে খোঁজ।
কোকিল ডাকলো বলেই বসন্ত এলো, না বসন্ত এলো বলেই কোকিল ডাকলে? ভাব হ’ল বলে রস হ’ল, না রস জাগলো বলে’