পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৪৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৩৮
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

ওটা সেটার সঙ্গে, একটু দরদ পৌঁছল দেখা শোনা ছোঁয়ার মধ্যে। এ একটা মস্ত ওলট-পালট ঘটলো হাত পা চক্ষু কর্ণের কাযের স্বাভাবিক ও যান্ত্রিক ধারার—উজান টান ধরলো যমুনায়। ফুলের পাতার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম সাড়া ধরার জন্য আচার্য জগদীশচন্দ্রের যে যন্ত্রটা, সেটা থেকে থেকে আনমনে যদি ফুলের এবং পাতার শোভা নিরীক্ষণ করতে আরম্ভ করে কায ভুলে, তবে নিশ্চয়ই সবাই বলবে যন্ত্রটা বিগড়েছে—যে ভাবে দেখা যে ভাবে শোনা যন্ত্রটার উচিত ছিল তা করছে না। কিন্তু যন্ত্রের ঐরূপ ব্যবহার দেখে একটা অত্যন্ত বিস্ময়কর বিপর্যয় শক্তি যে যন্ত্রটা লাভ করেছে তা কারু অগোচর থাকবে না। তেমনি ইন্দ্রিয়সকলের সাধারণ ক্রিয়ার মধ্যে নিরূপণ-ইচ্ছা নিবিষ্ট হবার চেষ্টা যারা ঘটায় অভ্যাস শিক্ষা ও সাধনার দ্বারায়, বলতেই হবে সেই সব মানুষের দেখা শোনা সমস্তই অনন্যসাধারণ বা অসামান্য রকমের একটা শক্তি পেয়েছে। এই যে কৌতূহল-প্রবণতা, দরদ দিয়ে সব জিনিষ দেখার অভ্যাস, কাযের দেখার প্রায় বিপরীত উপায়ে সৃষ্টির জিনিষকে আলিঙ্গন করে পরখ করা, ছেলেবেলাকার হারিয়ে-যাওয়া খেলাঘরের কাজ-ভোলা দৃষ্টি,—একে ফিরে পাওয়া দরকার কি না, এ নিয়ে মানুষে মানুষে মতভেদ দেখা যায় কিন্তু একদিনও মানুষ একটিবার সেই ছেলেবেলার দেখা শোনা খেলা ধূলোর মধ্যে ফিরে যেতে ইচ্ছা করলে না এমন ঘটনা মানুষে বিরল। চেষ্টা করলেই ছেলেবেলার সেই কাজ-ভোলা হারানো দৃষ্টি যে ফিরে পাওয়া যায় তা নয়। নাসার ডগায় দৃষ্টি স্থির করলেও, চাঁদ তারা মেঘ অথবা সূর্যের দিকে উদয়াস্ত হাঁ করে চেয়ে থাকলেও অথবা খাঁচায় কোকিল পুষে তার গান দিন রাত শুনে এবং দক্ষিণ বাতাসকে চাদর উড়িয়ে ছুঁয়েও যোগীর এবং ভাবুকের দৃষ্টি পাচ্ছে না কত যে লোক তার ঠিকানা নেই। সখ করে’ নানা সৌখীন জিনিষের সাজসজ্জার দিকে অথবা বিচিত্রা এই বিশ্ব প্রকৃতির শোভা সৌন্দর্যের দিকে চাওয়া হল বিলাসীর চাওয়া। বেতাল পঁচিশের ভোজনবিলাসী শয্যাবিলাসী এরা সাতপুরু গদির তলায় একগাছি চুল, রাজভোগ চালে শবগন্ধ অতি সহজেই ধরতে পারতো, কিন্তু বিলাসীর দেখা প্রকাণ্ড রকম স্বার্থ নিয়ে দেখা, অত্যধিক মাত্রায় কাযের দেখা এ দৃষ্টি ভাবুকের দৃষ্টি কিম্বা কায-ভোলা শিশুর সরল দৃষ্টি একেবারেই নয়, অতিমাত্রায় বস্তুগত