শিল্পের সচলতা ও অচলতা
ছবি কবিতা অভিনয় যাই বল সেটা চল্লো কি না এই নিয়ে কথা। যে বীজের মধ্যে মাটি ঠেলে ওঠবার শক্তি না পৌঁছল সে বীজ ফল থেকে বেড়ে চলতে চলতে গাছ হতে চল্লো না, কবির ভাষা, ছবির ভাষা, গায়ক নর্তক অভিনেতা এদের ভাষার পক্ষেও ঐ কথা। যে ভাষা প্রয়োগ করছে সেই দেখছে মন দিয়ে লেখা তীরের মত সোজাসুজি চলে, কিন্তু অভিধান ইত্যাদি দিয়ে লেখা যতই ভারি করা যায়, শক্ত করা যায় ততই সে কচ্ছপের মতো আস্তে আস্তে চলে। অন্তরের শক্তি বীজকে ঠেলে নিয়ে চলে আলোর অভিমুখে রসাতল ভেদ করে’, ভাষাকেও গতি দেয় পরিপুষ্টতার দিকে মানুষের অন্তর বা মনের গুণ। দু’একটা উদাহরণ দিয়ে বোঝাচ্ছি, মনের গুণ ভাষাতে গিয়ে পৌঁছয় এবং কাযও করে কতকটা—মনে যেখানে ছবি কি ছাপ পরিষ্কার নেই সেখানে ছবির রেখাপাত বর্ণবিন্যাস সমস্তের মধ্যে একটা আবল্য আলস্য অস্ফুটতা আমরা দেখতে পাই, কবিতার বেলায়ও এটা দেখি কথার মধ্যে যেন ঝোঁক নেই ঝিমিয়ে আছে আবল তাবল বকে চলেছে ভাষা—প্রথম উদাহরণ—
“ছার রিপু ছলেতে নাশ গো শীঘ্র শিবা
ছাওয়ালেরে ছেড়ে দেহ কর মাগো কিবা।
ছল ছল চক্ষু ছাড়ি ফাটেগো বন্ধনে
ছট ফট করে প্রাণ ছাড়িবে কেমনে৷”
ভাষায় ত্বরা নেই ঝিমিয়ে চলেছে কেননা কবির মন এখানে ‘ছ’ অক্ষরের ফাঁকিটা লিখতে ছ-প্রমুখ বাক্যগুলোকে পটের সেপাইয়ের মতো খালি প্রতি ছত্রের গোড়াতে স্থির ভাবে দাঁড়াতে হুকুম করলেন, কাযেই কথাগুলো নড়াচড়া কিছুই করলে না, কাঠের সেপাই কাঠ হয়ে ভাষার চলার পথ আগলে রইলো। খুব খানিক ঝোঁক দিয়ে এটা পড়ে যেতে চেষ্টা করলেই বুঝবে কতটা অচল এটা। অত্যাশ্চর্য অদ্ভুত রসের দেবতা হলেন ব্রহ্মা, তাঁর পুরী বর্ণন হচ্ছে—
“কিবা মনোহর দেখিতে সুন্দর
শোভে ব্রহ্মপুর সবার উপর।