পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
শিল্পে অনধিকার

আর যদি সমালোচনা করি তো মনে-মনে; এর চেয়ে বেশী আপাতত নাই হলো।

 শিল্পের একটা মূলমন্ত্রই হচ্চে ‘নালমতিবিস্তরেণ’। অতি-বিস্তরে যে অপর্য্যাপ্ত রস থাকে, তা নয়। অমৃত হয় একটি ফোঁটা, তৃপ্তি দেয় অফুরন্ত! আর ঐ অমৃতি জিলাবির বিস্তার মস্ত, কিন্তু খেলে পেটটা মস্ত হয়ে ওঠে আর বুক চেপে ধরে বিষম রকম। শিল্পরসের উপর অধিকারের দাবি আমার যে কত অল্প, তা আমি যেমন জানি, এমন তো কেউ নয়। কারণ অমৃত-বণ্টনের ভার নিতে আমি একেবারেই নারাজ। আমার সাধ্য যা, তাই দেবার হুকুম পেয়েছি। দিতে হবে যা আছে আমার সংগ্রহ করা,—শিল্পের ভাবনা-চিন্তা কাজ-কর্ম্ম সমস্তই—যা আমার মনোমত ও মনোগত। কারো মনোমত করে গড়া নয়, নিজের অভিমত জিনিষ গড়তেই আমি শিখেছি,—আর শিখেছি সেটাকে জোর করে কারু ঘাড়ে চাপাবার না চেষ্টা করতে। ‘আদানে ক্ষিপ্রকারিতা প্রতিদানে চিরায়ুতা’—শিল্পীর উপরে শাস্ত্রকারের এই হুকুমটার একটা মানে হচ্ছে সব জিনিষের কৌশল আর রস চট্‌পট্‌ আদায় করতে হবে; কিন্তু সেটা পরিবেষণ করবার বেলায় ভেবে-চিন্তে চল্‌বে। কেউ কেউ ভয় করছেন, সুযোগ পেয়ে এইবার আমি নিজের এবং নিজের দলের শিল্পের একচোট বিজ্ঞাপন বিলি করে নেব। সেটা আমি বলছি মিথ্যে ভয়। শিল্পলোকে যাত্রীদের জন্য একটা গাইড্‌বুক পর্য্যন্ত রচনা করার অভিসন্ধি আমার নেই, কেন না আমিও একজন যাত্রী—যে চলেছে আপনার পথ আপনি খুঁজতে খুঁজতে। এই খোঁজাতেই শিল্পীর মজা। এই মজা থেকে কাউকে বঞ্চিত করার ইচ্ছে আমার একেবারেই নেই। শুধু যাঁরা এই শিল্পের পথে আমার অগ্রগামী, তাঁদেরই উপদেশ আমি সবাইকে স্মরণে রেখে চল্‌তে বলি—“ধীরে ধীরে পথ ধরো মুসাফির, সীড়ী হৈ অধবনী!”—দুর্গম সোপান, হে যাত্রী, ধীরে পা রাখ। এ ছাড়া বিজ্ঞাপনের কথা যা শুনছি, তার উত্তরে আমি বলি—ফুল যেমন তার বিজ্ঞাপন দিচ্ছে নানা বর্ণে সাজিয়ে, বসন্তঋতু লট্‌কে দিচ্ছে তার বিজ্ঞাপন আকাশ বাতাস পৃথিবী ছেয়ে, তেমনি করে বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন সব কবি, শিল্পীই; আর তাই দেখে ও শুনে কেউ করছে উহু, কেউ উঁহু, কেউ আহা, কেউ বাহা! এটা তো প্রতি পলেই দেখছি, সুতরাং শিল্পের বিজ্ঞাপন দেব আমি আজকালের নূতন