পাতা:বাঙলার তন্ত্র - পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পুরাণের সুঠিপ্ৰকারণ এই বাদ অনুসারে ভিন্ন রকমের হইয়া গিয়াছে। আর একটি কথা আছে। বৈষ্ণব পুরাণ মাত্রেই, যথা-বিষ্ণু, গরুড়, নৃসিংহ, ক্ষাত্রপুরাণ অর্থাৎ ক্ষত্ৰশক্তি বিকাশের, ক্ষাত্র মহিমা প্রচারের পুরাণ। আর শৈব ও শাক্ত পুরাণে ব্ৰাহ্মণ্য প্ৰতিষ্ঠার কথাই ফুটাইয়া তোলা আছে। বৈষ্ণব পুরাণসকলে অসুর, দৈত্য, দানব, রাক্ষস প্ৰভৃতিকে শাক্ত বা শৈব ধর্মাবলম্বী বলিয়া পরিচিত করা হইয়াছে ; যেমন রাবণ, হিরণ্যকশিপু, কংসপ্রমুখ অসুর মাত্রেই শৈব বা শাক্ত, - এবং বৈষ্ণবদ্বেষী। পাল্টা জবাবের হিসাবে শৈব ও শাক্ত পুরাণে বিষ্ণুভক্ত অসুর বা দুর্ধর্ষ ক্ষত্রিয় রাজার উল্লেখ আছে। জয়দেবের সময় হইতে বাঙ্গালার লোকসাধারণের মধ্যে প্রচারিত হইয়া আছে যে, ভগবান দশটা অবতার গ্ৰহণ করিয়াছিলেন। শ্ৰীমদ্ভাগবত বলেন, শ্ৰীভগবানের অসংখ্য অবতার, তাহার মধ্যে প্রধান বাইশ জন । শ্ৰীমদ্ভগবতের তালিকায় সে বাইশটি অবতারের উল্লেখ নাই । আমার মনে হয়, শৈব শাক্ত এবং বৈষ্ণবের মধ্যে আপোস করিয়া, ব্ৰাহ্মণ্য ও ক্ষাত্ৰ শক্তির মধ্যে সামঞ্জস্য ঘটাইয়া ভগবানের দশটা অবতারের উদ্ভব সাধন হইয়াছে । দশ অবতারের মধ্যে পাঁচ জন ব্ৰাহ্মণ, পাচ জন ক্ষত্রিয় ; মৎস্য, বরাহ, বামন, পরশুরাম এবং কান্ধী, এই পাচ জন ব্ৰাহ্মণ, কুৰ্ম, নৃসিংহ, শ্ৰীরাম, বলরাম, বুদ্ধ, এই পাঁচ জন ক্ষত্ৰিয় | শৈব ও বৈষ্ণব পুরাণে নুসিংহের জাতি লইয়া একটু বিরোধ আছে। শৈব পুরাণমতে নৃসিংহ ব্ৰাহ্মণ এবং শিবের অবতার, বিষ্ণুপুরাণমতে নৃসিংহ ক্ষত্রিয় এবং বিষ্ণুর অবতার। এই আপোস এবং বিরোধের প্রতি লক্ষ্য রাখিয়া প্ৰত্যেক পুরাণের সৃষ্টিপ্রকরণ বুঝিবার চেষ্ঠা করিলে প্রত্যেক পুরাণ হইতেই এক একটা নূতন তত্ত্বের আবিষ্কার হইতে পারে। সৃষ্টিপ্রকরণ প্ৰত্যেক পুরাণের সুচক বা Introductory ; স্বল্পষ্টপ্রকরণ পাঠ করিলেই কতকটা বুঝা যায় --সেই পুরাণে কোন সিদ্ধান্তের কেমন বিশ্লেষণ করা হইবে। এই সঙ্গে আর একটা কথা মনে রাখিতে হইবে । স্বষ্টিতত্ত্ব দেহতত্ত্বের সহিত মিলাইয়া মিশাইয়া লেখা । বিশ্বসৃষ্টি এবং মনুষ্য বা জীবদেহ সৃষ্টি যে একই প্রকরণ অনুসারে হইয়া থাকে, ইহা তন্ত্রের সিদ্ধান্ত এবং এই সিদ্ধান্ত সকল পুরাণই গ্ৰহণ করিয়াছেন ৷ দেহতত্ত্বের বিশেষণ যে পুরাণে যে ভাবে করা হইয়াছে, সেই পুরাণের স্বত্নতত্ত্ব সেই ভাবে লিখিত হইয়াছে। শিব, কালিকা, মার্কণ্ডেয়, লিঙ্গ প্ৰভৃতি শৈব ও শাক্ত পুরাণসকলে তন্ত্রের সিদ্ধান্ত যোল আনা অনুসরণ করিয়া স্বাক্ট প্রকরণ লেখা হইয়াছে। বৈষ্ণব পুরাণসকলে s