পাতা:বাঙলা সাহিত্য পরিচয়-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পাওয়া যায় না বলিয়া ইহার তারিখ নির্ণয় করার কোন উপায় নাই। একটা কাহিনী অবলম্বন করিয়া ইহার একটা মোটামুটি সময় নিদ্ধারণ করা হইয়া থাকে। কথিত হয় যে বিজয় সিংহ নামক ‘রাঢ়’-দেশীয় এক রাজপুত্র সিংহল জয় করিয়া সেখানে উপনিবেশ স্থাপন করিয়াছিলেন। সিংহলের ইতিহাস হইতে জান। ষায় যে ইহা খ্ৰীষ্ট পূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর কথা । সুতরাং এই কাহিনী যদি সত্য হয় তবে খ্ৰীষ্ট পূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর আগেই আধ্যগণ বঙ্গদেশ অধিকার করেন ; কারণ বিজয় সিংহ নামটি বাঙালী নয় সম্পূর্ণরূপেই আধ্য। যাহা হোক, আৰ্য্যদের মগধ ও বঙ্গ অধিকারের পর ঐদেশের অধিবাসীরা আৰ্য্যদের ধৰ্ম্ম, রীতি-নীতি, ভাষা ও আচার-ব্যবহার অবলম্বন করিলেও নিজেদের পৃথুক সত্ত্ব সম্পূর্ণরূপে বিসর্জন দেয় নাই ; অনেকটা বিজেতাদের সহিত বিজিতের মত সম্পর্ক স্থাপন করিয়াছিল। কয়েক শতাব্দী পর তাহার! আবার স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করিয়াছিল ; উত্তরাপথের উৰ্ব্বাঞ্চলে আর্যদের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী আন্দোলন এবং বিদ্রোহু আরম্ভ হয়। ধৰ্ম্ম ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এই আন্দোলন আত্মপ্রকাশ করে বৌদ্ধ ও জৈনধৰ্ম্মের মধ্য দিয়া এবং ইহারা প্রসার লাভ করে দেশের আর্য্যেতর জাতিগুলির মধ্যে । এইজন্য বহুকাল পর্য্যন্ত আৰ্য্যধৰ্ম্মশাস্ত্রে বুদ্ধদেবকে অবতার বলিয়া স্বীকার করা হয় নাই । রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, গৌতম বুদ্ধ ও মহাবীর বদ্ধমানের নির্বাণপ্রাপ্তির অল্পকাল পরে অনার্য্য শিশুনাগ বংশীয় বিম্বিসার ও অজাতশত্রু একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেন এবং বৌদ্ধধৰ্ম্ম প্রচারের যথেষ্ট সহায়তা করিয়াছিলেন । তঁহাদের পর মহানন্দের পুত্র শূদ্র জাতীয় মহাপদ্ম নন্দ সিংহাসন অধিকার করিয়া নন্দবংশের প্রতিষ্ঠা করেন এবং ভারতের সমস্ত ক্ষত্রিয়কুল নিৰ্ম্মল করিয়া একচ্ছত্র সম্রাট হইয়াছিলেন । এই সময়ে, অর্থাৎ আনুমানিক খ্ৰীষ্ট পূর্ব ৩২৭ সালে দিগ্বিজয়ী আলেকজেণ্ডার পঞ্চনদ অধিকার করিয়া বিপাশা তীরে উপস্থিত হন। এখানে তিনি আর্য্যাবৰ্ত্তের পূর্বপ্রান্তে অবস্থিত “প্রালিই” (প্রাচ্য) এবং “গঙ্গেরিডই” ( গঙ্গারাঢ় ) নামে দুইটি পরাক্রান্ত রাজ্যের কথা শুনিয়াছিলেন। নন্দগণ সিংহাসনচ্যুত হইবার পর মৌর্য্যবংশের প্রথম নরপতি চন্দ্রগুপ্ত যখন গ্রীক অধিকৃত পঞ্চনদ প্রদেশে প্রবেশ করিয়া মগধ সাম্রাজ্যের আয়তন বৃদ্ধি করেন, তখন সম্ভবতঃ দক্ষিণ বঙ্গে ও দক্ষিণ কৌশলে একটি স্বতন্ত্র রাজ্য ছিল । আলেকজেণ্ডার প্রেরিত রাজদূত মেগাস্থিনিল চন্দ্রগুপ্তের সভায় অবস্থানের সময়ে প্রাচ্য জগতের যে বিবরণ লিপিবদ্ধ করিয়া গিয়াছিলেন, তাহার যেটুকু অংশ ,●