পাতা:বাঙলা সাহিত্য পরিচয়-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শশাঙ্ক হিন্দুধৰ্ম্ম পুনর্জীবিত করিতে চেষ্টা করিয়াছিলেন এবং ইহার জন্য কিছুটা বৌদ্ধদিগকে নির্ধ্যাতনও করিয়াছিলেন । সপ্তম শতাব্দীর শেষে ও অষ্টম শতাব্দীর প্রথমে বিদেশীয় রাজগণ কর্তৃক বারংবার আক্রান্ত হইয়া গৌড়ীয় প্রজাবুন্দ অতিশয় বিপন্ন হইয়া পড়ে। ইহা ছাড়াও, মগধের গুপ্তবংশীয় দ্বিতীয় জীবিতগুপ্তের মৃত্যুর পর আর কোন রাজা বোধহয় মগধ-গৌড়বঙ্গে স্বীয় অধিকার দৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করিতে পারে নাই। ফলে খ্ৰীষ্টীয় অষ্টম শতাব্দীর মধ্যভাগে উত্তরাপথের প্রাচ্য খণ্ডে ঘোর অরাজকতা এবং মাৎস্ত ষ্টায় চলিতে থাকে । থালিমপুরে আবিষ্কৃত ধৰ্ম্মপালদেবের তাম্রশাসনে পাওয়া যায় যে, প্রকৃতিপুঞ্জ মৎস্ত ন্যায় দূর করিবার জন্ত বপ্যট নামক রণকুশল ব্যক্তির পুত্র গোপালদেবকে রাজা নির্বাচিত করিয়াছিল। ইহা আনুমানিক খ্ৰীষ্টীয় ৭৫০ অব্দের মধ্যে ঘটে । গোপালদেব পাল বংশের প্রথম রাজা । তাহার রাজ্যকাল হইতে মগধ, গৌড় ও বঙ্গের পাল-সাম্রাজ্যের ইতিহাস আরম্ভ হয়। পাল রাজগণ এক বিশাল বঙ্গ-রাজ্য স্থাপন করিয়া দেশকে সঙ্ঘবদ্ধ ও স্বশাসিত করেন, আর্য্যভূমের রাজগণের প্রথা অনুসরণ করিয়া তাহারা সাহিত্য ও শিল্পকলার সমৃদ্ধি সাধনে যত্নবান হইয়াছিলেন । কবি ও শিল্পী তাহাদের রাজসভা অলঙ্কত করিতেন । পাল-রাজগণের আশ্রযে সন্ধ্যাকর নন্দী রামচরিত নামক কাব্য বচন করেন । পাল বংশীয় রাজা ধৰ্ম্মপালের নাম বাঙলা ধৰ্ম্মমঙ্গল কাব্যে পাওযা যায় । বাঙলা ভাষা ও সাহিত্যের ধারাবাহিক ইতিবৃত্ত রচনার সর্বপ্রধান অস্তুরায উপাদানের অভাব। প্রাকৃতিক আবহাওয়ার প্রভাবে প্রাচীন পুথি নষ্ট হইয়া গিয়াছে ; লৌকিক প্রসিদ্ধি বা প্রবচনে অনেক কাব্যের নাম উল্লিখিত আছে, কিন্তু তাঙ্গদের নিদর্শন আজও পাওয়া যায় নাই । ইহা ছাড়াও আর একটা কারণ আছে । ইউরোপীয শিক্ষা প্রবর্তনের ফলে আমাদের দেশের শিক্ষিত সম্প্রদায় প্রাচীন সাহিত্য ধারার সহিত যোগাযোগ ছিন্ন করিয়া ফেলেন । সেই সময় অনেক পুথি এরূপক্ষেত্রে আবদ্ধ হয়, যেখানে কথন ও । বর্ণজ্ঞান প্রবেশ করে নাই ; কোথাও এগুলি অনা শুক বিবেচনায় অনাদরে গৃহকোণে জমা হইযাছিল, কোথাও বা প্রাচীন ধৰ্ম্মগ্রন্থরূপে পূজিত হইতেছিল। বঁfকুড়া জেলার এক রজক গুহের চাল হইতে অত্যন্ত আকস্মিকভাবে শ্রীকৃষ্ণকীৰ্ত্তনের পুথি আবিষ্কৃত ইয়া বাঙলা সাহিত্যের ইতিহাসে নূতন আলোকপাত করে । নেপাল রাজদরবারের গ্রন্থশালায় এইভাবে বৌদ্ধ গান ও দোহার পুথি পাওয়া যায় এব বাঙলা ভাষার ধারা নিদ্ধারণে একটি অমূল্য সম্পদরূপে পরিগণিত হয় ।