পাতা:বাঙলা সাহিত্য পরিচয়-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সুতরাং অসম্পূর্ণ, অসংলগ্ন উপাদান লইয়া যতই বৈজ্ঞানিকভাবে বাঙলা ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাস রচনা করা যায়, নূতন আবিষ্কারের ফলে পুরাতন সিদ্ধান্তের পরিবর্তন ঘটতে থাকে। যুক্তি আপাতদৃষ্টিতে অকাট্য হইলেও অভ্রান্ত বস্তু প্রমাণের অভাবে অনেক জিনিষই নিশ্চয় করিয়া বলিতে পারা যায় না, গ্রহণ করিতেও বাধে । তথাপি প্রচেষ্টার অন্ত নাই ; পূর্বাচাৰ্য্যগণের গবেষণা অনুগামীদের পথ সুগম করিয়াছে। একদিন বাঙলার ইতিহাস সম্পূর্ণাঙ্গ হইয় উঠবে বলিয়া এখন বিশ্বাস করা যায় । বাঙল দেশের ইতিহাসের যতটুকু আমরা পাইয়াছি, তাহাকে আর্য্যপ্রভাবিত বলা চলে। আৰ্যসভ্যতার চাপে পড়িয়া বাঙলার আধ্য-পূৰ্ব্ববর্তী অধিবাসীদের কথা—তাতাদের জীবনযাত্রা, তাছাদের ভাষা, আচার-ব্যবহার, ধৰ্ম্মকৰ্ম্ম আৰ্য্য ইতিহাসের অন্তরালে আত্মগোপন করিয়াছে। প্রথম দৃষ্টিতে এরূপ মনে হওয়াই স্বাভাবিক যে, বাঙলার ইতিহাস আর্য্যসভ্যতারই ইতিহাস —ইহাতে আর্য্যেতর উপাদান একেবারেই নাই । বাঙলা ভাষার ইতিহাস সম্বন্ধে ঐ একই কথা । ডাঃ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় মহাশয় বহু পরিশ্রম করিয়া বাঙলা ভাষার ইতিহাস রচনা করিয়াছেন। বাঙলা ভাষার বিষয়ে কোন আলোচনা করিতে গেলে তাহাকেই একমাত্র নির্ভরযোগ্য আচার্য্য বলিয়া গ্রহণ করিতে হইবে । তিনি যে বাঙলা ভাষার ইতিহাস রচনা করিয়াছেন, তাহাকে এককথায় বর্ণনা করিতে গেলে বলিতে হয় যে বাঙলা দেশে প্রচলিত আৰ্য্যপ্রাকৃতসস্তুত কথ্য ভাষার ইতিহাস । বাঙলা ভাষায় ব্যবহৃত বহু শঙ্কের অম্বয় আধ্য ভাষার নিরিখে করা হইয়াছে ; যেগুলির ব্যাখ্যা করা যায় নাই কেবল সেগুলিকে দেশী আখ্যা দেওয়া হইয়াছে। এই দেশী কথাটির অর্থ, বাংল দেশের আধ্য পূৰ্ব্ববর্তী অধিবাসীদের ভাষা হইতে গৃহিত । তথাপি একথা স্বীকার করিতেই হইবে যে কেবলমাত্র কয়েকট শব্দের অবস্থিতি কোন ভাষার উপর অন্য ভাষার প্রভাব নিৰ্দ্ধারণের গুরুতর প্রমাণ নয় । তাহা হইলে সকল আৰ্য্যভাষাকেই এক বলা যায়, কারণ কতকগুলি শব্দ প্রায় সকল ভাষাতেই একইরূপে প্রচলিত আছে ; সংস্কৃত মাতৃ, পিতৃ শব্দের সহিত লাতিন Meter s Pater, st* Mater s Pater, stáin Mutter ( TSH) ও Vater (ফতর ), ফরাসী Mere ও Pere শব্দের সাদৃশু লক্ষণীয়। কাজেই ভাষার বাগিধি ও ব্যাকরণের বিশ্লেষণ দ্বারা এক ভাষার উপর অন্য ভাষার প্রভাব প্রমাণ করা অনাবশুক । ,