পাতা:বাঙলা সাহিত্য পরিচয়-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আৰ্য্যগণ যে ভাষা লইয়া ভারতে প্রবেশ করিয়াছিল, তাহার নিদর্শন পাওয়৷ যায় ঋগ্বেদের স্বত্রগুলিতে। এই ভাষার নাম ছন্দস, অর্থাৎ বৈদিক কবিতার ভাষা । ঋগ্বেদের স্বত্রগুলির মধ্যে একাধিক ভাষাগত বৈচিত্র্য দেখা যার বলিয়া অনুমান করা হইয়া থাকে ষে আৰ্য্যগণের এদেশে আগমন একসঙ্গে হয় নাই ; বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন দলে তাহারা আসিয়াছিল । প্রথম দল ও দ্বিতীয় দলের আগমনের মধ্যে সময়ের এরূপ ব্যবধান ছিল যে উভয় ভাষার পার্থক্য লক্ষণীয় ভাবে ফুটিয় উঠে এবং তাহ সুক্তগুলির মধ্যে অত্যন্ত সুস্পষ্ট । আর্য্যগণের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে তাহদের ভাষা ও সংস্কৃতিও প্রসার লাভ করিতে থাকে । কোথাও ইহা অবলীলাক্রমে প্রতিষ্ঠিত হয়, কোথাও অর্য্যেতর আদিম অধিবাসীদের প্রবল বাধায় সরিয়া আসিতে বাধ্য হয়। ইহার ফলে ভারতবর্ষের ভাষা ও সংস্কৃতি দুইটি বিভিন্ন ধারায় প্রবাহিত হইতে থাকে ;—উত্তর ভারতের আর্য্য-প্রভাবিত ভাষা ও সংস্কৃতি ও দক্ষিণ-ভারতের আর্য্য-প্রভাব বজিত দ্রাবিড় গোষ্ঠির ভাষা ও সংস্কৃতি । অবশু কালক্রমে আদান-প্রদানের ফলে উভয়েই উভয়কে প্রভাবিত করিয়াছে । কিন্তু যেসব অঞ্চলে আৰ্য্য ভাষা ও সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা লাভ করে সেখানের আর্য্য পূৰ্ব্ববৰ্ত্তী আদিম অধিবাসীরা আর্য্যদের মানিয়া লইলেও সম্পূর্ণরূপে আত্মবিসর্জন দেয় নাই ; তাহদের ভাষা ও সংস্কৃতি লইয়াই আৰ্ঘ্য ভাষা ও সংস্কৃতির সহিত মিলিত হয়। ফলে আর্য্যভাষা ও সংস্কৃতিতে এই আর্য্যেতর জাতির অনেক বৈশিষ্ট্য মিশিয়া যায়। আধ্যগণ এই মিশ্রণকে প্রতির চক্ষে দেখে নাই ; এই নবজাত ভাষাকে তাহারা প্রাকৃত অর্থাৎ ইতরজনের ভাষা বলিয়া অভিহিত করে। ( অবশু ইহার বিকল্প অর্থও দেওয়া আছে, যথা—প্রকৃতি হইতে জাত সরল, সহজ স্বাভাবিক ভাষা ) এবং এই ভাষায় যাহার কথা বলে তাহাদিগকে অস্ত্যজ অর্থাৎ ইনকুলোদ্ভব সংস্কারবর্জিত বলিয়া ঘৃণা করিতে থাকে। এদিকে ‘অনাৰ্য্যদের সংস্পর্শে দেবভাষা কলুষিত হইতেছে দেখিয়া এই ভাষার পবিত্রত রক্ষার জন্ত আৰ্য্যগণ চেষ্টা আরম্ভ করে। বিখ্যাত বৈয়াকরণ পাণিনি এই ভাষাকে শুদ্ধ ও সংস্কৃত করিলেন ; ইস্থার জন্য বিবিধ নিয়ম তাহার “অষ্টাধ্যায়ী” গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করিয়া দিলেন। তখন হইতে ঐ ভাষার নাম হইল সংস্কৃত অর্থাৎ refined ; ইহা শিক্ষিত ভদ্রশ্রেণীর ভাষা। প্রাচীন সংস্কৃত নাটকগুলিতে দেখিতে পাওয়া যায় যে সমাজের অভিজাত শ্রেণী এই সংস্কৃত ভাষা ব্যবহার করিতেছে, কিন্তু ভৃত্য প্রভৃতি প্রাকৃত ভাষাতেই কথাবার্তা কহিতেছে ; এমন কি অভিজাতশ্রেণীর স্ত্রীলোকের ও রাণী-মহারাণীর প্রাকৃতেই কথা কহিয়াছেন। ெ