পাতা:বাঙলা সাহিত্য পরিচয়-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সংস্কৃত ভাষাকে নিয়মবদ্ধ করার ফলে ইহার পবিত্রত রক্ষা হইয়াছে, সন্দেহ নাই ; কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে ইহার প্রসারও রুদ্ধ হইয়া যায়। ফলে, পাণিনির সময়ে ভাষা ষেরূপ ছিল আজও সেইরূপ আছে । s অপর দিকে, কথ্যভাষা সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন যাত্রার নিত্য প্রয়োজনে ব্যবহৃত হইতে থাকে বলিয়া ইহার গতি রুদ্ধ হয় নাই ; বরং আবখ্যক মত পরিবর্তন ও পরিবর্দ্ধন দ্বারা নব নব রূপ লাভ করিয়াছে। কথ্যভাষার সতেজ গতি ও প্রকাশ-ক্ষমতা সংস্কৃত ভাষা পন্থীরা সহজেই স্বীকার করিয়া লইয়াছে এবং প্রয়োজন মত কথ্যভাষা হইতে শব্দ আহরণ করিয়া উহাকে সংস্কৃত শব্দের মত রূপ দিয়া নিজস্ব বলিয়া আত্মসাৎ করিয়াছে [ তুলনীয়-প্রাকৃত পুত্তল শৰ যাহা শিশুগণ খেলার পুতুলকে পুত্র’—সম্বোধনে ব্যবহার করিত, তাহাকে ‘পুত্তলিকা’ রূপে সংস্কৃতে গ্রহণ করা হইয়াছে পুতুল বুঝাইতে ] | অবশ্য কথ্য-ভাষার এই প্রসার তাহারা প্রীতির চক্ষে দেখে নাই ; কথ্যভাষায় শাস্ত্র গ্রন্থ রচনার বিরুদ্ধে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়া এই ভাষার জনপ্রিয়তা রোধ করিবার চেষ্টা যথেষ্টই হইয়াছে। কিন্তু কিছুতেই কোন ফল দেখা যায় নাই ; কালতরঙ্গ কেহই বোধ করিতে পারে না । ভারতবর্ষের আর্য্য-অধিকৃত অঞ্চলের এক একটি অংশে কথ্যভাষা সেখানকার বৈশিষ্ট্য অনুসারে এক একটি অল্পবিস্তর স্বতন্ত্র রূপ পরিগ্রহ করে, বৰ্ত্তমান বাঙল ভাষা এইরূপ একটি কথ্যভাষার বংশধর । কিন্তু এখানেও সংস্কৃত ভাষাদ্ব'বা ইহার কণ্ঠরোধ করার চেষ্টার ক্রটি হয় নাই। সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিতগণের অভিভাবকত্বে বাঙলা ভাষা ক্রমশ দুবোধ্য হইয়া উঠিতে থাকে ; যখনই কেহ সেই ভাষায় কথ্যভাৰ হইতে শব্দ আহরণ করিয়া ব্যবহারের চেষ্টা করিয়াছে, সে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ ও উপহাসের পাত্র হইয়াছে । কিন্তু এখানেও সেই একই কথা ; কালতরঙ্গ রুদ্ধ হয় নাই, কথ্যভাষা জয়যুক্ত হইয়াছে। বাঙলা ভাষা সংস্কৃতের নাগপাশ হইতে মুক্ত হইয়া সৰ্ব্বসাধারণের সম্পদরূপে আদর লাভ করিয়াছে । প্রাকৃত ভাষাভাষী অশিক্ষিত জনসাধারণের নিত্য ব্যবহারের ফলে সংস্কৃত ভাষার বহু শব্দ পরিবৰ্ত্তিত রূপ লাভ করে ; অবগু এই পরিবর্তন ভাষাতত্ত্বের নিয়ম অনুসারেই হইয়াছে। কিন্তু ইহার সকল স্তরের নিদর্শন পাওয়া যায় নাই। তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বের সাহায্যে ইহাদিগকে অনুমান করিয়া লওয়া হইয়াছে। এই পরিবর্তনের একটি মনোজ্ঞ দৃষ্টান্ত রচনা করিয়াছেন ডাঃ সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় মহাশয় তাহাই এখানে যথাযথ উদ্ধত করা হইল ঃ– So