পাতা:বাঙলা সাহিত্য পরিচয়-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(২) মোহেন্‌-জে-দড়ো ও হরপ্পায় আবিষ্কৃত মুদ্র রা শীল-মোহরে যে লিপি পাওয়া গিয়াছে, তা সম্ভবতঃ কোন অনার্য ভাষায় লিখিত ; এই চার হাজার বছরের প্রাচীন লিপির পাঠোদ্ধার এখনও হয়নি। তবে এই ভারতীয় প্রাচীন অনার্য লিপি থেকেও প্রাচীন ভারতীয় আর্য লিপির উদ্ভব হওয়া অসম্ভব নয়। ব্রাহ্মী লিপির গঠনপ্রণালী সরল, এর বর্ণগুলির মাথায় কোনও মাত্রা-রেখা নাই। .এগুলিকে গঠনের দিক দিয়ে বিচার করলে ভাস্কর্য-শিল্পের-ই অন্তর্গত বলা যেতে পারে ; যেন কতকগুলি আলাদা আলাদা নক্স আঁকা হয়েছে । ব্রাহ্মী একদিনেই ভারতের একমাত্র লিপিতে পরিণত হয়নি ; একে অনেক দিন ধরে অনেক সংগ্রামের মধ্যে দিয়েই যেতে ষ্ট'য়েছে । রাজ অশোকের সময়েই ভারতের উত্তর-পশ্চিম প্রদেশে পারস্তের একিমেনিয়ান সাম্রাজ্যে প্রচলিত খরোষ্ট নামক সেমিটিক লিপি ব্যবহৃত হয়েছিল ; কিন্তু দেশের রাজ ব্রাহ্মীকে গ্রহণ করায় এটা ক্রমশঃ লোপ পায় । কুষাণদিগের রাজত্বকালে ব্রাহ্মী লিপির গঠনে সামান্ত একটু পরিবর্তন দেখা যায়। কিন্তু মোটের উপর এগুলি ছিল চওড়া অপেক্ষা লম্বাই বেশি। গুপ্ত রাজবংশের সময়ে ব্রাহ্মী লম্বা ও চওড়ায় সমান দাড়ায় এবং প্রত্যেক অক্ষরের মাথায় মাত্রীর মত রেথ দেখা যায় । যতই দিন যায়, ব্রাহ্মী লিপিও লেখার সুবিধার দিকে দৃষ্টি রেখে সামান্ত সামান্ত পরিবর্তন সাধন করে । এই পরিবর্তন আবার দেশে দেশে ভিন্ন ভিন্ন রকমের হয়েছিল। এই জন্য খ্ৰীষ্টীয় ৭ম শতাব্দীতে উত্তর ভারতের ব্রাহ্মী লিপির সঙ্গে দক্ষিণ ভারতের ব্রাহ্মী লিপির পার্থক্য দেখলে ধারণ করা খুবই কঠিন হ’ত যে দুটিই একই লিপির পরিণতি । এই সমযে ব্রাহ্মী লিপির নিদর্শন চীন এবং জাপানে প্রচুর পাওয়া যায়। সেখানকার প্যাগোডা প্রভৃতি ধৰ্ম্মমন্দির এই লিপিতে লেখা সংস্কৃত মন্ত্র দিয়ে সাজানো হয়েছে । সম্রাট হর্ষবর্ধন ৬৪৮ খ্ৰীষ্টাব্দে মৃত্যুমুখে পতিত হন। এর পর উত্তর ভারতে কিছুদিন ধরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যের শাসন চলেছিল। এই সময়ে রাজনৈতিক ঐক্যের অভাবে যেমন একদিকে সামাজিক ঐক্যের অভাব দেখা দিয়েছিল, তেমনই লিপিও ভিন্ন ভিন্ন প্রাদেশিক রাজ্যে বিভিন্ন রূপ ধারণ করে। খ্ৰীষ্টীয় ৭ম ও ৮ম শতাব্দীতে তিনটি সম্পূর্ণ পৃথক লিপি উত্তর ভারতে প্রচলিত হয়েছিল – (১) শ্ৰীহৰ্ষলিপি-গুজরাট, রাজপুতানা এবং যুক্তপ্রদেশের পশ্চিমাংশে প্রচলিত । (২) শারদালিপি—পাঞ্জাব ও কাশ্মীরে প্রচলিত। Σ &