পাতা:বাঙলা সাহিত্য পরিচয়-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তাহাই চর্ষারচরিতার নাম বলিয়া মনে হয়। এই পুস্তক মগধের রাজা গোবিন্দপালের ৩৯ বৎসর বয়সের সময়ে লিখিত । ইহা ঠিক হইলে উহাকে ১১৯৯ খ্ৰীষ্টাব্দে রচিত বলিয়া ধরিতে হইবে । সুতরাং চর্যাকার কৃষ্ণাচার্যপাদকেও আমরা ১২ শতাব্দীর শেষভাগে ফেলিতে পারি। এই বিচারে চর্যাপদগুলির রচনাকাল খ্ৰীষ্টীয় ১০ম শতকের ২য় ভাগ হইতে ১২শ শতকের শেষভাগের মধ্যে ফেলা যাইতে পারে । এই সময়ে বাঙলার রাজগণ বৌদ্ধ ছিলেন । এই পুস্তকখানিও বৌদ্ধ সহজিয়াদের গ্রন্থ । এই পুস্তকের মাত্র এক তৃতীয়াংশ বাঙলাভাষায় লেখা । কিন্তু এই ভাষা লইয়া কিছু কিছু মতভেদ দেখা যায়। গ্রন্থের বর্ণিত বিষয় যেমন একটা যৌগিক পন্থার গৃঢ় রহস্ত, ভাষাটিও তেমনি রহস্তাবৃত। অনেকে ইহার নাম দিয়াছেন ‘সন্ধা ভাষা ; অর্থাৎ ইহা সন্ধ্যার ন্যায় আলো-আঁধারি—কিছু বুঝা যায়, কিছু যায় না । বাস্তবিক পক্ষে, অনেক সময়ে ইহাদের বাহ্যিক রূপের মধ্যে বিশেষ সঙ্গত কোনও অর্গ পাওয়া যায় না । কিন্তু গুহ্য অর্থ ধরিতে পারিলে সাধন-বিষয়ক নানা তত্ত্ব জানিতে পারা যায়। অনেকে বলেন ভাষাটি সন্ধা অর্থাৎ Intentional language অনেকে আবার ইহাদের মোটেই বাঙলাভাষা বলিয়া স্বীকার করেন না । কেচ কেহ ইহাদের প্রাকৃত, অপভ্রংশ, প্রভৃতি আখ্যা দিয়াছেন ; কেহ কেহ এগুলিকে আবীর পশ্চিম-মাগধীর লক্ষণাক্রান্ত এবং পশ্চিম-মাগধীর বর্তমান প্রচলিত ভাষাগুলিরই আদিরূপ বলেন । কিন্তু ডক্টর সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় মহাশয় বলেন যে এই পদগুলির ব্যাকরণ, মধ্য-বাঙলা এবং বর্তমান-বাঙলার সহিত ইহার ক্রম বিবর্তনের নিয়মিত এবং সুস্পষ্ট সংযোগ দেখিয়া ইহাদের প্রাচীন বাঙলারই খাটি নিদর্শন বলিয়া মনে হয় । সুনীতিবাবুর মতে চর্যাপদের ভাষা পশ্চিমবঙ্গের প্রাচীন ভাষার খাটি নিদর্শন। তবে ৯ম হইতে ১২শ শতাব্দী পর্যন্ত রাজপুত রাজাদের প্রভাবে শৌরসেনী অপভ্রংশ সমগ্র ভারতবর্ষে প্রাধান্ত লাভ করিয়াছিল,—ইহারই ফলে দোহাপদের ভাষার উপরেও মাঝে মাঝে শৌরসেনীর প্রভাব দেখা যায় এবং কখনও কখনও মধ্যযুগের সাহিত্যিক প্রাকৃতেরও প্রভাব লক্ষিত হয় । দোহাগুলি পড়িলে মনে হয় যে বাঙলাভাষাকে সাহিত্যে ব্যবহারের এই বোধ হয় প্রথম প্রয়াস । সেইজন্য দোহ-রচয়িতাদেরও স্বীয় ভাষার প্রয়োগ সম্বন্ধে যথেষ্ট বিশ্বাস ছিল না। একটু অসুবিধা বোধ করিলেই তাহার প্রাকৃত, সংস্কৃত অথবা শৌরসেনী অপভ্রংশের সাহায্য লইয়াছেন । পদগুলির স্থানে স্থানে এমন وه لار রত্ন ৬-ই