পাতা:বাঙলা সাহিত্য পরিচয়-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নদীর পরিচয় যেমন তাহার উৎসে পাওয়া যায় না, কোনও সাহিত্যের পরিচয়ও সেইরূপ তাহার উৎপত্তি-স্থলে নাই। পৃথিবীর সকল দেশের সাহিত্যই কোন-না-কোন ক্ষুদ্র এবং অকিঞ্চিৎকর মূল হইতে উঠিয়াছে। তারপর ইহার প্রবহমান ধারা ইহাকে এরূপভাবে চালিত করিয়াছে যে মূলের সহিত ইহার সম্বন্ধ বাহির করিতে হইলে রীতিমত গবেষণার প্রযোজন হইবে। তাই, সকল সময়ে কোনও দেশের সাহিত্যের ইতিহাস রচনায় তাহার মূল উৎসের অনুসন্ধান করা লাভজনক নহে ; অনেক সময়েই ইহা নিতান্ত নিম্প্রয়োজন বলিয়া মনে হয়। বাঙলা সাহিত্যের ইতিহাস রচিত হইবার বহুপূর্বেই অন্তান্ত দেশের সাহিত্যইতিহাস রচিত হইয়াছিল। এই সকল ইতিহাস-সঙ্কলনকারীদিগের চেষ্টা ও পরিশ্রমলব্ধ জ্ঞান আমরা বাঙলা সাহিত্যের ইতিহাস রচনার প্রয়োগ করিলে লাভবান হইব সন্দেহ নাই । বিভিন্ন দেশের সাহিত্য-ইতিহাস তুলনামূলকভাবে পাঠ করিলে আমরা সহজেই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হইতে পারি যে সকল দেশের সাহিত্য-প্রচেষ্টার প্রাথমিক অবস্থায় যখন মানুষের মনে আত্ম-প্রকাশের চিন্তা সবেমাত্র জাগিয়াছে তখন সে জীবনের স্থলতম অনুভূতিগুলিকে লইয়াই কাব্যরচনার প্রয়াস করিত। এই অনুভূতিগুলি হইতেছে ক্রোধ, হিংসা, দ্বেষ, ঘৃণা, লজ্জা, ভয়, বীরত্ব, প্রেম প্রভৃতি। অনুভূতিগুলি স্থল বলিয়া বর্ণিত বিষয়ও সরল ও সোজাসুজি ছিল; ইহাতে জীবনের প্রকৃত রূপটিকেই গ্রহণ করা হইত, কোন ভাবাদশ দেখাইবার চেষ্টা ছিল না। সাহিত্যের এইরূপ প্রাথমিক প্রচেষ্টাকে ইংরাজি সাহিত্যে ব্যালাড (Ballad ) বলা হইয়াছে । সে দেশীয় সমালোচকগণ মহাকাব্যকে স্বেরূপ Authentic ও Literary রূপে ভাগ করিয়া কাজের সুবিধা করিয়াছেন, আমরাও ব্যালডিকে গীতিকা বলিয়া তাহীদের প্রামাণিক ও সাহিত্যিকরূপে ভাগ করিতে চাই । যেগুলি প্রাচীনকালে প্রাচীন ভাবধারা লইয়া প্রাচীন পদ্ধতিতে রচিত হইয়াছিল, তাহারাই প্রামাণিক এবং যেগুলি আধুনিককালে আধুনিক মনোভাব লইয়া প্রাচীন ভাবধারাকে আশ্রয় করিয়া প্রাচীন পদ্ধতিতে রচিত তাহারাই সাহিত্যিক । দৃষ্টান্তস্বরূপ, কৃত্তিবাসের রামায়ণকে প্রামাণিক এবং মাইকেল মধুস্থদনের মেঘনাদবধকে সাহিত্যিক বলিতে হইবে। প্রাকৃতিক আবহাওয়ার জন্য আমাদের দেশে প্রাচীন সাহিত্যের নিদর্শন পাওয়া যায় না। সেইজন্ত অনেক সময়ে আমাদের জনশ্রুতি, কিংবদন্তী, প্রবাদ প্রভৃতির আশ্ৰয় লইতে হয়। বলা বাহুল্য, এইপথে চলিতে ভুল হইবার সম্ভাবনাই অধিক । 출