পাতা:বাঙলা সাহিত্য পরিচয়-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তথাপি, প্রাচীন অন্ধকার যুগ সম্বন্ধে কোনও কথা বলিতে গেলে এরূপভাবেই অগ্রসর হইতে হইবে ; ইহা ছাড়া আর গতি নাই। বাঙলা সাহিত্যের মূল উৎস কোথায় ; ইহার গোড়াপত্তন ঐরুপ প্রাচীন ও প্রামাণিক গীতিক দ্বারা হইয়াছিল কিনা, ইহা নিধারণ করিতে হইলে বাঙলা সাহিত্যের প্রধান ভাবধারা কি তাহাই সর্বপ্রথম বুঝিতে হইবে। প্রচলিত ভাবধারার সহিত আদিরূপের স্বাভাবিক ঐক্য থাকাই সম্ভব । * ভারতবর্ষের সকল ভাষাতেই যাহা কিছু রচিত হইয়াছে, তাহ কোন-না-কোন ধর্মসম্প্রদায়ের চেষ্টা দ্বারা সাধিত । ইহাদের মধ্যে অনেকগুলি ধৰ্মতত্ত্বের গৃঢ় তাৎপর্যের ব্যাখ্যা ; সহজে ইহাদের সাহিত্য পর্যায়ে ফেলা কঠিন। কাজেই, ভারতীয় সাহিত্যের মূলে রহিয়াছে ধর্মমত প্রচার ; ধর্মই ইহার কেন্দ্রস্থল। বাঙলা সাহিত্যের মূলেও এই ধর্মভাব প্রবল ; তবে বাঙালী কবি ধর্ম-সংক্রান্ত বিষয়বস্তুকে রোমাঞ্চকর করিয়া তুলিতে অসাধারণ দক্ষতার পরিচয় দিয়াছেন । ধর্মমত প্রচারের উদ্দেশ্রে গ্রন্থকে জনপ্রিয় করিবার জন্য যে সকল উপ-বস্তুর সন্নিবেশ করিয়াছেন সেগুলিকে কোনও ধর্মসম্প্রদায়ই ভাল বলিয়া স্বীকার করিবেন না । হিন্দুদের যাবতীয় তথ্য সংস্কৃত ভাষায় রচিত গ্রন্থ-সমূহে লিপিবদ্ধ রহিয়াছে। জনসাধারণের বোধগম্য ভাষায় রচিত সাহিত্যের মূল সেইজন্য আমাদের সংস্কৃত সাহিত্যের মধ্যে খুজিতে হইবে । হিন্দুদের যে সকল দেবদেবীর কথা সংস্কৃত শাস্ত্রাদি গ্রন্থে লিখিত, তাহদের লইয়াই বাংলা সাহিত্যের জন্ম। কিন্তু এখানে একটি কথা আছে—বৌদ্ধ-ধর্মের পতনের পর ব্রাহ্মণ্য ধর্মের যে পুনরাবির্ভাব হয়, তাহার পরে বাঙলা দেশে সাহিত্যস্থষ্টি আরব্ধ হইয়াছে। সেই সময়ে বাঙলা দেশে ষে বৌদ্ধপ্রভাব ছিল, তাহা হিন্দু সমাজের মধ্যেই কতক পরিমাণে আত্মগোপন করিয়াছিল। তাই, বৌদ্ধ মতের সহিত সামঞ্জস্ত রাখিতে হিন্দু দেবদেবীর রূপ বদল করিতে হইয়াছে। সংস্কৃত শাস্ত্রে বর্ণিত দেবদেবীর সহিত হিন্দু দেবদেবীর অনেক পার্থক্য দেখা দিয়াছে । হিন্দুদের আদি ধর্মগ্রন্থ বেদ । এই শাস্ত্রপাঠে ব্রাহ্মণ ভিন্ন অন্ত জাতির অধিকার ছিল না। তাই জনসাধারণের নিকট বৈদিক ধর্মকে সুপ্রতিষ্ঠিত করিবার জন্ত প্রাচীন ও পুরাতন আখ্যায়িকা এবং ঐতিহ্য সংগ্ৰহ করিয়া পুরাণগ্রন্থগুলি রচিত হইয়াছিল। জনসাধারণের শিক্ষা এবং মনোরঞ্জনের জন্য পুরাণ রচিত হইয়াছিল বলিয়া পুরাণকে ধর্মবুদ্ধিগ্রাহ রূপ দিতে হইয়াছিল। তাই পরবর্তী কালে পুরাণের রূপ পরিবর্তিত হইয় রূপক ও অলৌকিক ঘটনাদ্বারা দেবদেবীর মাহাত্ম্য প্রচারিত