পাতা:বাঙলা সাহিত্য পরিচয়-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হয়। এই পুরাণগ্রন্থ সমুহের বহুল প্রচার ছিল। তাই বাঙলা সাহিত্যের উৎপত্তিস্থল বলিতে আমাদের পুরাণকেই বুঝিতে হয়। কিন্তু এখানেও একটা কথা আছে—পুরাণে দেবদেবীর বর্ণন যে ভাবে রহিয়াছে. বাঙলা সাহিত্যে ঠিক সে ভাবে নাই ; বৌদ্ধধর্মের প্রভাবে ইহার মধ্যে অনেক পরিবর্তন সাধিত হইয়াছে। এই পরিবর্তনের মূলে রহিয়াছে জনসাধারণের কল্পনাশক্তি ; যুগে যুগে সংশোধন ও সংযোজনের ফলে শাস্ত্রীয় দেবদেবী লৌকিক আকার ধারণ করিয়াছেন। ইহা নিশ্চয়ই একদিনে হয় নাই । কি রকম করিয়া এই রূপান্তর সাধিত হইয়াছে, তাহা জানা যায় না, সকল দেবদেবীর কাহিনীর উপযুক্ত প্রমাণও পাওয়া যায় না । সামান্ত দু’ একটি কাহিনীর খণ্ড খণ্ড, অসংলগ্ন প্রমাণের সাহায্যে আমাদের অবশিষ্ট অংশটি অনুমান করিয়া লইতে হইবে। যে সকল দেবদেবীর কাহিনী বাঙলা সাহিত্যের বিষয়-বস্তু হইয়াছে তাহীদের মধ্যে শিব, চণ্ডী, মনসা, ধর্মঠাকুর, কালী, অন্নদা, কৃষ্ণ, শীতলা প্রভৃতির নাম উল্লেখযোগ্য । এই সমস্ত দেবদেবীর মাহাত্ম্য প্রচারে বহু কবি বহু ভাবেই শ্রম করিয়াছেন । এই সকল দেবদেবীর মধ্যে অনেকের কথাই কোনও শাস্ত্রে উল্লিখিত হয় নাই ; তাহদের লৌকিক আখ্যায় অভিহিত করা ছাড়া উপায় নাই। নানা কারণে শিবকেই ভারতের প্রাচীনতম দেবতা বলিয়া নিধারিত করা হইয়াছে । কাজেক্ট, শিবের মাহাত্ম্য যে সাহিত্যে প্রচারিত হইয়াছে তাহদের প্রাচীনতম বলা ঘাইতে পারে। শিবের মাহাত্ম্য প্রচারে খুব বেশি সাহিত্য স্বষ্টি হয় নাই সত্য, কিন্তু প্রায় সকল কাব্যের মধ্যেই কোন না কোন প্রসঙ্গক্রমে শিবের কথা উল্লিখিত হইয়াছে ; ইহাতে অবশুই শিবের জনপ্রিয়তা সুচিত হইতেছে । এই দেবতাটিকে লইয়া নানাপ্রকার আমোদ-প্রমোদ চলিত। শিবকে লইয়া রচিত কাব্যের মধ্যে রামেশ্বরের শিবনারায়ণই সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ; ইহা আকারে যেমন বৃহৎ, তেমনিই স্বষ্টি-প্রকরণ হইতে আরম্ভ করিয়া দক্ষজজ্ঞ প্রভৃতি সমুদয় বৃত্তান্ত ইহাতে সন্নিবিষ্ট হইয়াছে। রামেশ্বরই ষে গ্রন্থের সমুদয় রচনা করিয়াছিলেন, একথা জোর করিয়া বলা যায় না ; হয়তে বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন কবি ইহাতে সংযোজন কার্য করিয়াছেন। কিন্তু রামেশ্বরের পূর্বে কোনও শিবায়ন ছিল কিনা, অথবা কিরূপ ছিল তাহা জানা যায় না। তবে রামেশ্বরের আদর্শ কি ছিল এবং কাহিনীর মূল কোথায় প্রশ্ন করিলে আমরা কেবলমাত্র এইটুকু বলিতে পারি যে উত্তর-বঙ্গে ধান ভান্‌তে শিবের গীত বলিয়া যে প্রবচন প্রচলিত তাহাতে শিবের যে গীতের কথা উল্লিখিত সেই লুপ্ত গীতগুলিই রামেশ্বরের ఇలి