পাতা:বাঙলা সাহিত্য পরিচয়-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আদর্শ ছিল বলিয়া বোধ হয়। গীতগুলি সম্ভবতঃ ছড়া-জাতীয় ; তাঁহাদের ব্যালাড-পর্যায়ে ফেলা যায়। চণ্ডীমঙ্গল সম্পর্কে ডক্টর শ্ৰীযুক্ত দীনেশচন্দ্র সেন মহাশয় বলিয়াছেন যে, বৃহদ্ধর্ম পুরাণের ত্বং কালকেতু ছলগোধিকাসি’ প্রভৃতি হইতে লৌকিক চণ্ডীমঙ্গল শাখার উদ্ভব হইয়াছে। কিন্তু এখানে প্রশ্ন করা র্যাইতে পারে যে বৃহদ্ধর্ম পুরাণকার এই কাহিনীর কথা উল্লেখ করিলেন কোথা হইতে ? এখানে অনুমান করা যাইতে পারে যে কালকেতু ও ধনপতির চণ্ডীদেবীর কৃপালাভের কাহিনী বৃহদ্ধর্ম পুরাণ রচনার পূর্বেই এদেশে প্রচলিত ছিল। বাঙালী কবি সম্ভবত এই কাহিনী হইতে উপাদান সংগ্ৰহ করিয়াছিলেন। বাঙলা ভাষায় রচিত চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের মধ্যে দ্বিজ জনার্দনের কাব্যই প্রাচীনতম। ডক্টর দীনেশচন্দ্র সেন মহাশয় এই কাব্যের একটি ২৫০ বৎসরের প্রাচীন পুথি পাইয়াছেন ; ইহার ভাষা ষথেষ্ট মার্জিত । এইরূপ, কাণ হরিদত্ত মনসা-মঙ্গলের প্রধান কবি। বিজয়গুপ্ত র্তাহার মনসামঙ্গলে হরিদত্তের কাব্যের যে পরিচয় দিয়াছেন, তাহ পাঠ করিলে জানিতে পারা যায় যে, উহাতে অক্ষরের মিল অথবা কথার সঙ্গতি ছিল না এবং রচনার কোনও নির্দিষ্ট রূপ ছিল না। কাজেই, উহাকেও আমরা ব্যালাড জাতীয় কাব্য বলিয়া গ্রহণ করিতে পারি। এইরূপ ভাবে অনুসন্ধান করিলে দেখা যায় যে, বাঙলা সাহিত্যের ছোট বড় সকল শাখারই আরম্ভ এইরূপ কোন না কোন অজ্ঞাত এবং ক্ষুদ্র কাব্য হইতে যাচাদের আমরা গীতিকা অথবা ব্যালাড বলিয়া অভিহিত করিতে পারি। এই সকল প্রাচীন কাব্যগুলি প্রামাণিক গীতিকা ; ইহাদের মধ্যে খুব অল্পসংখ্যক গীতিকার সন্ধান পাওয়া গিয়াছে । অধিকাংশই অজ্ঞাত থাকিয়া চিরদিন আমাদের কৌতুহল বৃদ্ধি করিবে। এইরূপ সামান্ত মূল হইতে বাহির হইয়া বাঙলা কাব্য আপনার প্রসার লাভ করিয়াছে ; এই সামান্ত উৎস হইতে জন্মলাভ করিয়া প্রাচীন বাঙলা সাহিত্য যে সমৃদ্ধি লাভ করিয়াছে তাছা বিস্ময়কর। এই সমৃদ্ধ এবং পরিণত রূপ আমরা পাই বাঙলা মঙ্গল কাব্যে অর্থাৎ পাঁচালী গানের মধ্যে। এই মঙ্গল কাব্যের যুগ হইতেই সাহিত্যের ধারাবাহিক ও সুসম্বদ্ধ ইতিহাস রচিত হইতে পারে। কেবলমাত্র ইহাতেই কবির পরিচয়, গ্রন্থের রচনাকাল প্রভৃতি আবশুকীয় উপাদান পাওয়া .ষায় । এইগুলি বিশদভাবে প্রচারিত এবং রক্ষিত হইয়াছিল বলিয়া ইহাদের একাধিক নিদর্শন পাওয়া গিয়াছে। ૨ 3