পাতা:বাঙলা সাহিত্য পরিচয়-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাব্যের বিষয়বস্তু আলোচনা করিলে দেখিতে পাইব যে এখানেও পুরাণের স্থায় পাঁচটি লক্ষণ স্পষ্টভাবে বিদ্যমান।— ১ । সকল জনপ্রিয় দেবতাদের স্তুতিরূপ মঙ্গলাচরণের দ্বারা গ্রন্থ আরম্ভ । ২ । দেবতা বিশেষের মাহাত্ম্য বর্ণন ও পূজা প্রচারের উদ্দেন্তে গ্রন্থের উৎপত্তি। ৩। দৈব লীলায় ব্যক্তিবিশেষের ভাগ্য-বিপর্যয় । ৪ । সুখ-দুঃখের বিশদ বর্ণনা ( বার মাস্তা প্রভৃতি ) ৷ ৫ । কলহাদি হাস্যরসাত্মক ঘটনার সমাবেশ ( সম্ভবতঃ পালা গানকে জনপ্রিয় করিবার জন্য )। এই তথ্যের উপর নির্ভর করিয়া যদি আমরা এরূপ অনুমান করি যে মূলে এই জাতীয় পাঁচটি লক্ষণ ছিল বলিয়া হয়তো মঙ্গল-কাব্যকে পাঁচালী বলা হয়, তাহা হইলে বিশেষ অসঙ্গত হইবে না। মঙ্গল’ শব্দটি এক বিশেষ প্রকারের শ্ৰব্য-কাব্য সম্বন্ধে, তুর্কী বিজয়ের পূর্বেই বাঙলা ভাষায় রূঢ়ী হষ্টয়া গেলেও প্রকৃত পক্ষে ইহার পর হইতেই ধারাবাহিক সাহিত্য প্রচেষ্টার পরিচয় পাওয়া যায়। কাজেই ইহাদের মধ্যে ইসলাম ধর্মের প্রভাব পড়িয়া ইহাকে একটি অনুপ্রকার রূপ দিয়াছে বলিয়া গীতগোবিন্দের অনুরূপ মঙ্গল কাব্য শ্ৰীকৃষ্ণ কীৰ্ত্তনের সহিত, পরবর্তীকালের মঙ্গল কাব্যের কোনই মিল নাই । ইহা কিরূপে সম্ভব হইয়াছিল তাঁহাই এখন আলোচিত হইবে । কালানুযায়ী জনসাধারণকে সন্তুষ্ট করিবার জন্য পুরাণকার পুরাণের পুরাতন বিষয়-বস্তুর পরিবর্তন সাধন এবং নুতন সম্পাদন সংযোজন দ্বারা উহাকে সর্বজনপ্রিয় করিতে বিশেষ যত্নবান ছিলেন । সেইজন্য অতি প্রাচীন পুরাণের সহিত অপেক্ষাকৃত আধুনিক পুরাণের যথেষ্ট পার্থক্য দেখিতে পাওয়া যায়। মঙ্গল কাব্যের প্রাচীন নিদর্শন বেশি নাই । কিন্তু সেখানেও পরিবতন ঘটিয়াছিল। কোনও প্রতিষ্ঠান বেশিদিন একভাবে চলিলে তাহার মধ্যে শিথিলতা এবং ক্রট প্রবেশ করে ; তখন ইহার সংশোধন দ্বারা নবজীবন দান না করিলে ইহা ধ্বংস হইয়া যায়। হিন্দুধর্মকেও বহুবার এইরূপ প্রতিকুল অবস্থার সম্মুখীন হইতে হইয়াছে। বৈদিক ধর্মে যে ক্রটি প্রবেশ করিয়াছিল বুদ্ধদেবের আবির্ভাবে তাহার সংশোধনে ব্রাহ্মণগণ বিশেষ যত্নবান হইয়াছিলেন । ইহার ফলে শাস্ত্রগ্রন্থের স্বত্রগুলি নুতনভাবে ব্যাখ্যা করা হইলে তাঁহাতে নুতন প্রাণ সঞ্চারিত হয়। তারপর হিন্দু ও বৌদ্ধধর্ম অবনতির পথে ধাবিত হইবার পর ইসলামধর্মের আবির্ভাব হয় । হিন্দুসমাজের শ্রেণীবিভাগের নির্মম অত্যাচার এবং বৌদ্ধ-বিদ্বেষের সম্মুখে ইসলামধর্ম তাহার সার্বজনীন ভ্রাতৃভাব যে সাম্যের চিত্র প্রদর্শিত করে, তাহাতে আকৃষ্ট হইয়া ২ঞ্জ