পাতা:বাঙলা সাহিত্য পরিচয়-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অনেক হিন্দু ও বৌদ্ধ এই নবাগত ধর্মকে স্বেচ্ছায় আলিঙ্গন করিয়াছিল । এই বিপদের হাত হইতে হিন্দুসমাজকে রক্ষা করিবার জন্য তাহার যে আভ্যন্তরিক সংস্কারের প্রয়োজন হইয়াছিল, সেজন্য শ্রীচৈতন্যদেবের আবির্ভাব হইয়াছিল । সকল শ্রেণীর হিন্দুদের সংঘবদ্ধ করিয়া স্বধর্মে তাহাদের আস্থা-স্থাপনের জন্য ষে প্রচারকার্যের প্রয়োজন হইয়াছিল, তাহ সাধিত হইয়াছিল এই মঙ্গলকাব্যের মধ্যে। সাম্যবাদী ইসলামের প্রভাব প্রতিরোধ করিবার জন্য সমাজের নিম্নশ্রেণীর অস্পৃশুদিগকে কাব্যের নায়ক করা হইল ; তাহদের মধ্য দেবদুর্লভ গুণের সমাবেশ করা হইল এবং দেখান হইল যে হিন্দু দেব-দেবী তাহদের অবহেলা করে না । তাই ব্রাহ্মণ-কবি মুকুন্দরামের চণ্ডীমঙ্গলের নায়ক কালকেতু জাতিতে ব্যাধ এবং ঘনরাম চক্রবর্তীর ধর্মমঙ্গলের কালুডোম সত্যনিষ্ঠায় দ্বিজশ্রেষ্ঠ । ধৰ্মকলহে যদি বাঙলা সাহিত্যের শ্রবৃদ্ধি হইয়া থাকে, তাহ। এইভাবেই হইয়াছিল । মঙ্গল-কাব্যের মধ্যে শক্তি-বৈষ্ণব প্রভৃতি ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম-সম্প্রদায়ের দ্বন্দ্ব দেখিতে পাওয়া যায়, তাহাকেও এইভাবে ব্যাখ্যা করিতে হইবে। দ্বাদশ অশ্বরোচীর ভয়ে, লক্ষ্মণসেনের পলায়নের কাহিনীর কোনও ঐতিহাসিক মূল্য না থাকিলেও ইহার মধ্যে বাঙালী জাতির একটা পরিচয় পাওয়া যাইতে পারে । লক্ষ্মণসেন বৃদ্ধ হইয়াছিলেন সত্য, কিন্তু দেশশুদ্ধ লোক তো আর বৃদ্ধ হয় নাই ; তাহারাষ্ট বা ইহার প্রতিরোধ করিল না কেন ? ইহার একমাত্র উত্তর এই যে গীতগোবিন্দ গীতমুগ্ধ বাঙলাদেশ হইতে পৌরুষ বিদায় লইয়া ভীরুতা এবং কাপুরুষতাকে একাধিপত্য স্থাপন করিতে স্থান দিয়াছিল। জাতির এই দুর্বলতা দূর করিতে হইলে শক্তির সাধনা প্রয়োজন ; তাই মঙ্গল-কাব্যে এরূপ দেবদেবীর আবির্ভাব করিতে হইল, র্যাঙ্গদের ক্ষমতা আমাদের চক্ষু ধাধাইয়া দিতে পারে, যাহাঁদের অঘটন-ঘটন-সক্ষম শক্তি দেখিয়া আমাদের সন্দেহের অবকাশ থাকে না, আমরা সহজেই ভক্তিতে অবনতচিত্ত হইয়া যাই । কিন্তু এখানেও একটা কথা আছে—বাঙলা দেশ এক সময়ে বৌদ্ধদিগের একটি প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হইয়াছিল ; এখানে বহু মঠে বহু সংখ্যক ভিক্ষু এবং ভিক্ষুণী বাস করিত। হিন্দুধর্মের পুনরভুত্থানের পর ইহাদের উপর যে অমানুষিক অত্যাচার চলিয়াছিল, তাহীদের মধ্যে একটা চাপা হিন্দু-বিদ্বেষ জন্মায়। তাই ইহার নবাগত ইসলাম-ধৰ্মকে একটা দেবানুগ্রহরুপে গ্রহণ করিতে উদগ্রীব হইয়াছিল। হিন্দুগণই বা ইহাদের ছাড়িবে কেন ? তাহারা যুগ যুগ ধরিয়া ইহাদের উপর যে প্রভুত্ব করিয়া আসিয়াছে, তাহা এত সহজে লুপ্ত হইতে তাহারা দিতে চায় নাই। হীনযানী বৌদ্ধদিগের মধ্যে ষে সকল দেবদেবী দেখা দেয় ཅན། ཞི་