পাতা:বাঙলা সাহিত্য পরিচয়-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গুণের সমাবেশ হইয়াছিল বলিয়া তাহার রচনা হইয়া উঠিয়ছিল মর্মস্পর্শী। বৈচিত্র্যহীন একটানা একঘেয়ে পয়ার ছন্দে একটির পর একটি করিয়া শ্ৰীকৃষ্ণের জীবনীর কাহিনীর সহজ, সরল ভাষায় বর্ণনা পাঠকের চিত্ত আকর্ষণ করিতে পারিত না, গ্রন্থটি কাব্য না হইয়৷ ঘটনার তালিকায় পরিণত হইত। এইখানেই মালাধরের কৃতিত্ব । তিনি আড়ম্বরহীন ভাষায় যাহা লিপিবদ্ধ করিয়াছেন, তাছাই তাহার হৃদয়ের ভক্তিরস এবং ভাবুকতায় সিঞ্চিত হইয়া মধুময় হইয়া উঠিয়াছে ; দেশের জনসাধারণ হইতে আরম্ভ করিয়া মুসলমান বঙ্গেশ্বরকে পর্যন্তও মুগ্ধ করিয়াছে। এইজন্য মালাধর প্রাচীন বাঙলীর আদিকবির আসনে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছেন । তাহার রচনার দৃষ্টান্তরূপে আমরা তাহার গ্রন্থ হইতে কিয়দংশ উদ্ধৃত করিতেছি ঃ– কেহ বলে পরাইমু পীত বসন । শীতল বাতাসে দিমু অঙ্গ জুড়ায়। চরণে নুপুর দিমু বলে কোত্ত্বজন ॥ কেহ বলে সুগন্ধি চন্দন দিমু গায় ॥ কেহ বলে বনমালা গাথি দিমুগলে । কেহ বলে চুড়া বানাইমু নানা ফুলে। মণিময় হার দিমু কোহু সখি বলে। মকর কুণ্ডল পরাইমু শ্রুতিমূলে ॥ কটিতে কঙ্কণ দিমু বলে কোত্ত্বজন । কেহ বলে রসিক সুজন বড় কান। কেহ বলে পরাইমু অমুল্য রতন ॥ কপূর তাম্বুল সমে জোগাইব পান। শিবায়ন মোহেঞ্জেীদড়োতে ভূগর্ভ খননের ফলে যে সকল দ্রব্যাদি পাওয়া গিয়াছে, তাহাতে নিঃসন্দেহে প্রমানিত হইয়াছে যে সেখানে খ্ৰীষ্টপূর্ব ২৫০০-৩• • • অব্দে এক উন্নত, সুসভ্য জাতি বাস করিত । বস্তু-প্রমাণের উপর নির্ভর করিয়া ইহাদের আচার-ব্যবহার, রীতি-নীতি, ধর্ম-কর্ম প্রভৃতি সম্বন্ধে কিছু স্পষ্ট ধারণা করা যাইতে পারে। অনেকে মনে করেন যে ভারতবর্ষের এই আর্য-পূর্ববর্তী জাতির সহিত ঋগ্বেদের আর্যগণ পরিচিত ছিলেন । র্ত্যহারী যাহাদিগকে কৃষ্ণগর্ভ, অনাস, দাস এবং দস্থ্য বলিয়া অভিহিত করিয়াছেন, তাহারাই সে-সময়ে মোহেঞ্জোদড়োতে বাস করিত। ইহাদিগকে ঘৃণার চক্ষে দেখা হইত। ইহাদের ধর্ম আর্যধর্ম হইতে বিভিন্ন, কারণ ইহাদিগকে অন্তব্লত বলা হইয়াছে। মোহেঞ্জোদড়োতে যে-সকল মুদ্রা পাওয়া গিয়াছে, তাহদের মধ্যে একটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ইহাতে একটি ত্রি-মুখ, ত্রি-নেত্র মূর্তি এক বৃক্ষতলে ●