পাতা:বাঙলা সাহিত্য পরিচয়-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পাওয়া গিয়াছে। কিন্তু ইহাদের সম্বন্ধে কিছু জানা যায় নাই এবং কাব্যের কোনও নিদর্শন আবিষ্কৃত হয় নাই । এই সময়ে উল্লেখযোগ্য আর একটি বিষয় আছে, বিলহনের শ্লোকগুলির যেমন: দুটি করিয়া অর্থ আছে, কালিকামঙ্গলের কবিগণও যে পঞ্চাশিক লিখিয়াছেন। তাহারও দুইটি অর্থ আছে। বন্দী সুন্দর রাজাকে যে শ্লোকগুলি শুনাইয়াছিলেন তাহা মুখ্য অর্থে কালিকার স্তুতি হইলেও গৌণ অর্থে বিদ্যার রূপ গুণেরই স্তুতিবাদ । নাথ-সাহিত্য নাথ-সাহিত্য নামে প্রচলিত একশ্রেণীর কাব্যে নাথ-উপাধিধারী কতকগুলি ধর্মগুরুর মহিমা কীর্তিত হইয়াছে। এগুলিকেও মঙ্গল-কাব্যের পর্যায়ে ফেলিতে হইবে ; কারণ মঙ্গলকাব্যের যে অন্যতম বৈশিষ্ট্য-দেবতা অথবা দেবভাবসম্পন্ন মানুষের মাহাত্ম্য প্রচার—ইহাদেরও তাঁহাই একমাত্র উদ্দেশু। অবশু এই শ্রেণীর কাব্য সংখ্যায় অধিক নহে। কিন্তু এই শাখার প্রচারিত কাহিনী এবং নাথ-ধম, এই দুইটি বিষয়ই প্রণিধানযোগ্য । নাথ-ধম বলিতে নাথ উপাধিধারী গুরুগণ যে ধম প্রচার করিয়াছেন তাঁহাই বুঝায়। ধমটি বিচিত্র এবং বাংলা দেশে প্রচলিত বিভিন্ন ধর্মই উহাকে এই বৈচিত্র্য দান করিয়াছে । আর্য-প্রভাব বিস্তারিত হইবার পূর্বে বাংলা দেশে কিরূপ ধর্মপদ্ধতি প্রচলিত ছিল তাহ! জানা যায় না, তবে অনেকে অনুমান করেন যে তখন শিব ও শক্তির একটা আদিম এবং অসংস্কৃত সংস্করণ প্রচলিত ছিল। পালরাজগণের অধিকারে আসিয়া বাংলাদেশ যেমন একটা রাষ্ট্রগত রূপ লাভ করিয়াছিল, তেমনই একটা স্বসংস্কৃত ধর্মমতের আশ্রয়ে এক হইবার সুযোগ লাভ করিয়াছিল। এই ধর্ম বৌদ্ধধর্ম, কারণ পালরাজগণ বৌদ্ধ ছিলেন। বৌদ্ধধর্মের ইতিহাস আলোচনা করিলে দেখা যায় যে দুই প্রকার অনুষ্ঠান অনুসারে ক্রমে ইহাদের মধ্যে ও দুইটি বিভাগ ঘটিয়াছে ; হীনযান ও মহাযান । হীনযান সম্প্রদায়ীরা সাংসারিক কর্তব্যকর্মাদির অনুশীলন পূর্বক স্বর্গ কামনায় সংযমউপবাসাদির অনুষ্ঠান করে এবং মহাযান পন্থীরা সংসার ছাড়িয়া বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরূপে নির্বাণ লাভ প্রত্যাশায় অধ্যাত্মজ্ঞানের অসুশীলন ও ধ্যানযোগের অনুষ্ঠান করে। পালরাজগণের পর যখন সেনরাজবংশ বঙ্গদেশ অধিকার করেন, তখন এদেশে ዓፄ