পাতা:বাঙলা সাহিত্য পরিচয়-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জন্য হীরার আলয়ে গেলেন । এদিকে চরমুখে রাজার লিখনপ্রেরণের সংবাদ পাইয়া হাঁর রাজাকে ভেক্ষা বানাইয়া শিকলে বধিয়া রাখিয়াছিল ; কাজেই হাড়িপাকে সে বলিয়া দিল ষে তাহার শিষ্য অনেকদিন পূর্বেই মরিয়া গিয়াছে। হাড়িপা ধ্যানবলে সমস্ত জানিতে পারিয়া মন্ত্রবলে ভেড়ার শিকল ছিড়িয়া তাহাকে মনুষ্যমূর্তি পরিগ্রন্থ করাইলেন এবং মহাজ্ঞান দিয়া দেশে প্রত্যাবর্তন করিতে বলিলেন। কিন্তু শিন্য যোগী হইতে চাহিলে পরদিবস তাহাকে মাথা মুড়াইয়া কর্ণে মুদ্রা পরাইয়া দিবেন বলিলেন । অন্তঃপুরে প্রবেশ করিয়া রাজা পত্নীদিগকে নিজ যোগবিভূতি দেখাইতে লাগিলেন। গুরু ধ্যানযোগে ইহা জানিতে পারিয়া রাজার মহাজ্ঞান হরণ করিলে রাজা আর কিছুই দেখাইতে পারিলেন না । শেষে পত্নীগণের বিদ্রুপে হাড়িপার উপর ক্রুদ্ধ হইয়া তাহাকে মাটিতে পুতিয়া ফুেলিলেন । এদিকে গোরক্ষনাথের নিকট সংবাদ পাইয়া কাম্প শিশুযোগীরূপে গোবিনচন্দ্রের রাজধানীতে প্রবেশ করিলে কোটাল তাহাকে বধিয়া লইয়া গেল। কিন্তু রাণীর কৃপায় মুক্তিলাভ করিয়া কামুপ রাজার নিকটে গিয়া মন্ত্রবলে হাড়িপীর ষোলশত শিষ্যকে সেখানে সমবেত করিল । রাজা বিস্মিত হইয় তাহাদের আহার করাইতে গেলেন, কিন্তু কিছুতেই তাহীদের পেট ভরে না । শেষে কামুপার শরণাপন্ন হইলেন। কানুপা সেই সুযোগে গুরুর মুক্তি সাধন করিল এবং গোপীচন্দ্রও রাজ্য এবং পত্নীত্যাগ করিয়া যোগীবেশে গুরুর সহিত দেশ ভ্রমণে বাহির হইলেন এবং এক বৎসর পরে গৃহে ফিরিয়া আসিলেন। গোবিন্দচন্দ্র মহাজ্ঞান লাভ করিয়া অমর হইলে রাণী পরমসুখ লাভ করিলেন । গোপীচন্দ্র রাজার কাহিনী সমগ্র ভারতবর্ষে প্রচলিত ছিল ; বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাষায় ইহা বর্ণিত হইয়াছে এবং রাজার সন্ন্যাস গ্রহণের চিত্র অঙ্কিত হইয়া ইহার জনপ্রিয়তা প্রমাণিত করিতেছে । এই সকল কাহিনী লইয়া অধিক কাব্যরচিত হয় নাই ; কাজেই ইহাদের লেখক সংখ্যাও অল্প। বর্ধমান জেলায় প্রাপ্ত দুলভ মল্পিক রচিত গোবিন্দচন্দ্রের গীত ভাষা ও কাহিনী বিবেচনায় প্রাচীনতম বলিয়া নির্দেশিত হইয়াছে। জুলাভের রচনা সহজ, সরল ও সংক্ষিপ্ত ; ইহাপেক্ষা গুণের কথা এই যে ঐ সকল কাহিনীত্তে যে নৈতিক অধোগতির পরিচয় পাওয়া যায়, স্থলভ তাহার আভাধমাত্ৰও নাই। গ্রন্থে কবির আত্ম-পরিচয় বা গ্ৰন্থরচনার কাল নাই বলিয়া সে বিষয়ে কিছুই জানা স্বাক্ষ্ম মা । t;)