পাতা:বাঙলা সাহিত্য পরিচয়-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

"দিতে লাগিল। ইহাতে দেবীর দয়া হইলে তাহার সম্মুখে তিনি আবিভূতা হইগেন এবং সব পুত্র ফিরাইয়া দিলেন। রুদ্ররাম চক্রবর্তীর ষষ্ঠকামঙ্গল এই শাখার বৃহত্তম কাৰ্য্য। ইহাতে তিনটি উপাখ্যান বর্ণিত হইয়াছে –(১) ষষ্ঠ ও কার্তিকেয়ের জন্ম, তারকাস্থর বধ, কার্তিকেয়ের তীর্থভ্রমণ ও বিবাহে অসম্মতি ; এগুলি সমস্তই পৌরাণিক কাহিনী। (২) কোলাঞ্চ দেশের রাজ্যচ্যুত রাজা ক্ষেত্রমিশ্রের প্রতি দেবীর অনুগ্রহে পুত্ৰলাভ এবং পুত্ৰকতৃক পিতৃরাজ্য উদ্ধার। (৩) কলাবতীর কাহিনী । সপ্তদশ শতাব্দী হইতে আর একটি দেবতার মাহাত্ম্য-কাহিনী বিশেষভাবে প্রচলিত হয় । হিন্দু ও মুসলমান, এই দুই সম্প্রদায়ের লোক কিছুকাল পাশাপাশি বাস করিয়া তাহারা উভয়ের মধ্যে একটা সৌহাৰ্দ্দ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এবং উভয় সম্প্রদায়ের সহজ গ্রাহ্য একটা ধর্মমত বা দেবর্চনা প্রচলনের চেষ্টা করিতে থাকে । তাই হিন্দুর দেবতার সহিত মুসলমানের পীরের মিলনাত্মক কাহিনী প্রচারিত এবং তাছা অবলম্বনে কাব্য রচিত হইতে থাকে। রায়মঙ্গলকাব্যেও এরূপ প্রচেষ্টার আভাস • পাওয়া যায় । কিন্তু সত্যনারায়ণের পাঁচালিতে ইহা যেরূপ ব্যাপক এবং অধিক প্রচলিত হইয়াছিল এরূপ আর কোনও হয় নাই। সত্যপীরের কাহিনীর প্রথম অংশে বর্ণিত হইয়াছে যে ভগবান শ্ৰীহরি এক দরিদ্র ব্রাহ্মণের উপর কৃপা করিয়া মুসলমান ফকিরের বেশে তাহার সম্মুখে উপস্থিত হন এবং তাহাকে সিন্নি ( ফারসী-শিরাণী { শীর মিষ্ট চিনি ] ) সহযোগে পূজা করিতে বলেন, ইহাতে ব্রাহ্মণ ধনরত্ন লাভ করে । কাহিনীর দ্বিতীয় অংশে বর্ণিত হইয়াছে বে এক সদাগর সত্যনারায়ণের কুপায় কন্তfলাভ করে এবং তাঁহার বিবাহ দিয়া জামাতাকে লইয়া বাণিজ্য যাত্রা করে ; কিন্তু সত্যনারায়ণের পূজা না করায় পথে বিপদ হয় ও পত্নীর পূজার ফলে তাহা হইতে মুক্তিলাভ করে। সদাগর গৃহে ফিরিলে তাহার কন্যা সত্যনারায়ণের প্রসাদ অবজ্ঞা করিয়া স্বামীর নিকট ছুটিলে ঘাটে নৌকা ডুবিয়া যায়। তখন পুনরায় সত্যনারায়ণের পূজা করায় নৌকাস্থদ্ধ সকলে জল হইতে উঠিয়া পড়ে । ভৈরবচন্দ্র ঘটকই সত্যপীরের পাচলির প্রাচীনতম কবি ; ইনি ১৭•• খ্ৰীষ্টাৰে কাব্য রচনা করেন। দ্বিজ রামকৃষ্ণ, বিকল চট্ট, দ্বিজ রামভদ্র, অযোধ্যারাম কবিচন্দ্র, কবি বল্লভ, দ্বিজ গিরিধর, কৃষ্ণকান্ত, শিবচন্দ্র সেন, রামশঙ্কর সেন, দ্বিজ কৃপারাম, কাশীনাথ ভট্টাচাৰ্য্য, দ্বিজ জনাৰ্দন ছাড়াও অসংখ্য কবি বঙ্গের বিভিন্ন স্থানে বসিয়া -সত্যপীরের মাহাত্ম্য কীৰ্ত্তন করেন। শিবায়ণের কবি রামেশ্বরই এই শাখার শ্ৰেষ্ঠ পাচালিকার ; কবিগুণাকর ভারতচন্দ্রও একটি পাঁচালি রচনা করয়াছিলেন। 抄*