পাতা:বাঙলা সাহিত্য পরিচয়-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

-বাঙালীর শিক্ষা এবং ধম সাধনার যতকিছু আদর্শ ও অনুকরণীয় আছে, তাহ সমস্তই ইহাতে লিপিবদ্ধ করিয়া রাখিয়াছেন। তাই প্রবাদে আছে যে, “যাহা নাই ভারতে, তাহা নাই ভারতে' ; মহাভারতে যাহা উল্লিখিত হয় নাই তাহার অস্তিত্ব ভারতবর্ষে महे । বাংলা মহাভারতগুলি ব্যাসদেব বিরচিত সংস্কৃত মহাভারতের অনুবাদ । কিন্তু অন্যান্য অনুবাদের ক্ষেত্রে যেরূপ ঘটিয়াছে, মহাভারতেও তদনুরূপ কবি স্বাধীনতার সহিত পরিবর্তন, পরিবর্জন এবং নূতন উৎপাদন সংযোজন করিয়াছেন। সুতরাং ইহাকে অনুবাদ অপেক্ষ বরং মৌলিক কাব্য বলাই অধিকতর যুক্তিযুক্ত। মহাভারতের প্রাচীনতম অনুবাদ হইয়াছিল হোসেন শাহের রাজত্বকালে । হোসেন শাহের সেনাপতি পরাগল খাঁ চট্টগ্রানে যুদ্ধ করিতে গিয়া সেখানেই বসবাস স্থাপন করেন এবং হিন্দুদিগের এই কাব্য শুনিতে ইচ্ছা করিা কবীন্দ্রকে ইহা বাংলা ভাষায় অনুবাদ করিতে আদেশ দেন । রাজকার্য সম্পাদনে অনেক সময় লাগিত বলিয়া তিনি অতি সংক্ষেপে মহাভারত রচনা করিতে বলেন ; তাই কবীন্দ্রের কাব্য মহাভারতের সংক্ষিপ্ত সার । কাব্য হইতে রচনা কাল সম্বন্ধে বিশেষ কিছুই জানা যায় না। তবে, হোসেন শাহ ১৫১৯ খৃষ্টাব্দ পর্যস্ত রাজত্ব করিয়াছিলেন ; স্বতরাং তাহার রাজত্বকালে রচিত কাব্য ১৬শ শতাব্দীর মধ্যেই হইয়াছিল বলিতে হইবে। কবীন্দ্র সম্বন্ধেও বিশেষ কিছু জানা যায় না ; তবে একটু জানা গিয়াছে যে র্তাহীর সম্বন্ধে অনেক ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত রহিয়াছে । অনেকে মনে করেন ষে র্তাহার নাম ছিল পরমেশ্বর, কিন্তু ইহা অজ্ঞ লিপিকরদের প্রমাদে স্ব ঔ হইয়াছে । আসলে কবি ভণিতায় “কবীন্দ্র পরম যত্নে” লিথিয়াছিলেন এবং তাহাই লিপিকরদের হাতে পড়িয়া “কবীন্দ্র পরমেশ্বরে” পরিণত হইয়াছে। সেইরূপ কাব্যের নাম ‘পাণ্ডব বিজয় কথা” ও “বিজয় পাণ্ডব কথা” লিপিকরদের ভ্রান্ত পাঠে “বিজয় পণ্ডিতের মহাভারত” নামে প্রগরিত এবং কিছুকাল পূর্বে মুদ্রিত ও প্রকাশিত হয় । কবীন্দ্র সমগ্র মহাভারতেরই অনুবাদ করিয়াছিলেন । পরাগলের পুত্র ছুটিখানের আদেশে শ্রীকর বা শ্রীকরণ নদী মহাভারতের আর একটি অনুবাদ করিয়াছিলেন। শ্রীকর ও কবীন্দ্র এক ব্যক্তি নহেন এবং শ্রীকর কবীন্দ্রের কাব্য সম্পূর্ণও করেন নাই, তিনি পৃথক কাব্য লিখিয়াছিলেন। এরূপ উক্তির প্রমাণস্বরূপ বলা যায় যে কবীন্দ্র জৈমিনীকে এবং ঐকর সঞ্জয়কে (বৈশম্পায়ণ) আদর্শ কন্ধিয়া কাব্য রচনা করেন। শ্রীকরের কাব্যের ভণিতায় উল্লিখিত সঞ্জয়ের নাম দেখিয়া অনেকে আবার সঞ্জয় নামে আর একটি ক বির অস্তিত্ব কল্পনা করিয়াছেন। منطین*