পাতা:বাঙ্গলার ইতিহাস-অষ্টাদশ শতাব্দী-নবাবী আমল.pdf/১০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

b-b- বাঙ্গলার ইতিহাস । : || দেশবাদিগণের অধিকাংশই যে হিন্দু, এবং তাহার রাজস্ব আদায় প্রভৃতি কাৰ্য্যে পূৰ্ব্বাপর নিয়োজিত থাকিয়া অধিকতর বুদ্ধিমত্তা ও কৰ্ম্মকুশলতা দেখাইয়াছেন, ইহা স্বীকার করা লেখকের উচিত ছিল। মুর্শিদকুলী খাঁর বিরুদ্ধে জমিদারপীড়নের প্রথম ও প্রধান অভিযোগ এই যে, বন্দোবস্ত সময়ে ও তৎপরে তিনি জমিদারগণকে কারারুদ্ধ করিয়া রাখেন। ইতিপূৰ্ব্বে বঙ্গের জমিদারগণের অনেকেই বিপ্লবের সুবিধায় রাজকর আদায় দানের পদ্ধতি একপ্রকার বিস্কৃত হইয়াছিলেন। উদয়নারায়ণ ও সীতারাম, অথবা কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণরামের অবস্থা কয়েকটি বৃহৎ দৃষ্টান্তমাত্র। অনেক ক্ষুদ্র জমিদারও অবসর পাইলে মোগলশাসনকৰ্ত্তাকে । অঙ্গুষ্ঠপ্রদর্শনে বিরত হইতেন না। বঙ্গের রাজকর এই কারণে এতই হ্রাস হয় যে, অর্থের জন্য অন্যত্র সাহায্য ভিক্ষা করিতে হইত। বাদশাহ আরঙ্গজেব এই ব্যবস্থার পঙ্কোদ্ধারের জন্তই রাজস্ববিং মুর্শিদকুলী খাকে বঙ্গে প্রেরণ করেন, পূৰ্ব্বেই উল্লিখিত হইয়াছে। কুলী খাও এই আবর্জনারাশি পরিষ্কার করিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন। মুবাদারী ও দেওয়ানী উভয় ক্ষমতা স্বহস্তে পাইয়াই তিনি রীতিমত ব্যবস্থা করিতে সক্ষম হইয়াছিলেন। এরূপ অবস্থায় অল্লাধিক অত্যাচার অবশ্যম্ভাবী। সেকালের চক্ষে দেখিলে, অবাধ্য জমিদারগণকে কিয়ংকাল কারারুদ্ধ বা নজরবনী রাখা বড় বেশী দোষের বিবেচিত হইবে না। প্রকৃতিপুঞ্জের ও ক্ষেত্রের অবস্থার উন্নতি সাধন করিয়া, রাজকোষে প্রাপ্য কর রীতিমত আদায় করার জন্তই এই ভাবে ব্যবহার হইয়াছিল। মুসলমান লেখক স্বয়ং তাহ প্রকারতঃ নির্দেশ করিয়াছেন । বর্তমানে কেডাষ্ট্রাল সার্ভে প্রজাবর্গের স্বার্থরক্ষার চেষ্টা করিতেছে ভাবিয়া, এক শ্রেণীর লোকে যেমন ইহার বিরুদ্ধে এ কালের একমাত্র সম্বল চীৎকারধ্বনি উখিত করিয়াছেন, তদানীন্তন দুরন্ত জমিদারবর্গ সেকালের মত করিয়া এই বন্দোবস্তের বাধা-প্রদানে বদ্ধপরিকর ছিলেন। - বাকী খাজনা আদায়ের জন্য জমিদারগণকে কারারুদ্ধ করা অথবা রাজধানীতে নজরবন্দী রাখা নবাবী আমলের আইনের ব্যবস্থা। নম্র স্বভাব সুজাউদ্দীন বা স্ববিখ্যাত প্রজারঞ্জক আলিবর্দী খাঁর সময়েও এই জন্য করিবার কথা ক্ষিতীশবংশাবলীতে দ্রষ্টব্য। এরূপ দৃষ্টান্ত অনেক আছে। সেকালের জমিদারের অধিকার ও কার্য বর্ণনায় ইহা পরিস্ফুট হইবে।