পাতা:বাঙ্গলার ইতিহাস-অষ্টাদশ শতাব্দী-নবাবী আমল.pdf/১৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>8br বাঙ্গালার ইতিহাস । ওঠ আন । বিটপিশ্রেণী চিকুণন্তামপত্র বহুল সহস্রশাখা বিস্তার করিয়া শ্রান্ত পথিকবর্গকে ছায়াদানে সুশীতল করে। সমস্ত দিনের শ্রান্তির পর ক্লান্ত বঙ্গীয় সৈন্ত ঐরূপ কোনও সরোবরতীরে তরুমূলে নিশাযাপন করিত। রাত্রি সমাগত দেখিলে, কি কৰ্ম্মচারী, কি সেনাগণ, সকলেই মৃত্তিকাসনে উপবিষ্ট হইয়া, বৃক্ষপত্র বা শম্পাদি দ্বারা উদরপূৰ্ত্তি করিয়া ধরাশয্যায় কিয়ংকাল বিশ্রাম করিত। নিম্নে বস্থঙ্করা শয্যার ও উপরে সংক্ষুব্ধ বর্ষার আকাশ আচ্ছাদনের কার্য্য নিৰ্ব্বাহ করিত। সেনাপতিগণের ও অন্তান্ত সন্ত্রান্ত ব্যক্তিগণের অবস্থাও সাধারণ সৈন্তগণের অবস্থার অপেক্ষা ভাল ছিল না। তাম্বু প্রভৃতি সমস্তই শক্ৰহস্তগত। প্রচুর অর্থ সত্ত্বেও আহাৰ্যসংগ্রহের কোন উপায় নাই। ধনগৰ্ব্বগৰ্ব্বিত বিলাসী ওমরাহগণ এক্ষণে স্বর্ণরৌপ্যদির স্বকীয় মূল্যের অকিঞ্চিৎকরত্ব বুঝিতে পারিলেন। কায়ক্লেশে প্রাণধারণ করা ব্যতীত কাহারও আর উপায়ান্তর ছিল না। বৃক্ষপত্র, বল্কল, এমন কি, পিপীলিকাদি কীটপতঙ্গ আত্মসাৎ করিয়াও অনেককে উদরপূৰ্ত্তি করিতে হইত। মৃতজীবের সামান্ত কিছু মাংস সংগৃহীত হইলে, তাহার জন্ত কড়াকড়ি পড়িয়া যাইত। কলার এটে রাজভোগের স্থান অধিকার করিয়াছিল । তারিখ-ইউসুফীর রচয়িত ইউসুফ আলি খাঁ স্বয়ং এ ক্ষেত্রে উপস্থিত ছিলেন, এবং সৈন্তগণের অপূৰ্ব্ব সাহসের ও কষ্টসহিষ্ণুতার বিশেষ বিবরণ দিয়াছেন। তিনি লিখিয়াছেন,-“বৰ্দ্ধমান হইতে কাটোয়ায় পহুছিবার তিন দিনের মধ্যে এক সময়ে আমরা তিন পোয় মাত্র খিচুড়ী সংগ্ৰহ করিতে পারিয়াছিলাম। নানাবিধ উপাদেয় প্রচুর খাদ্যে অভ্যস্ত আমরা সাত জন সন্ত্রান্ত ব্যক্তি সেইটুকু ভাগ করিয়া খাইয়াছিলাম। আর একদিন সাতটিমাত্র শকরপারা, ( ১ ) এবং তৃতীয় দিন কেবল অৰ্দ্ধসের মৃতপ্রাণীর মাংস সংগ্ৰহ করিতে পারিয়াছিলাম । শেষদিন রন্ধনের সময় আরও কয় জন লোক এক এক গ্রাসের প্রার্থন করেন,–ন দিয়া থাকিতে পারি নাই।” এইরূপ বিষম ক্লেশে ও অনাহারে ক্ষিপ্তপ্রায় নিস্তেজ নবাবী-সৈন্ত যুদ্ধ করিতে করিতে অগ্রসর হইতে লাগিল । কামানগুলি শক্ৰহস্তগত। বিপক্ষসৈন্তগণ চারি দিকে বেষ্টন করিয়াছে, কিন্তু আপনাদের মধ্যে ও নবাবী সেনাদলের মধ্যে এরূপ ব্যবধান রাখিয়াছে যে, নবাৰী সেনার বন্দুকের গুলি তাহাদিগকে স্পর্শও করিতে পারিতেছে না। ( ) এক প্রকার মিঠাই ।