পাতা:বাঙ্গলার ইতিহাস-অষ্টাদশ শতাব্দী-নবাবী আমল.pdf/৫৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ >ミ বাঙ্গলার ইতিহাস । ૨ ઃ -1, 4: ইতিহাস সাধারণ পাঠকের অবিদিত নাই । সেই মহা প্রাণ বিশ্বপ্রেমিকই হিন্দু মুসলমানকে একস্থত্রে বদ্ধ করিয়া, পরম্পরের স্বার্থ বিজড়িত দেখাইয়া, সহানুভূতি ও সম প্রাণতায় সমগ্র আর্যাবর্তকে বদ্ধ করিয়া, প্রকৃতি পুঞ্জের হৃদয়াসনে দেশীয় ভূপালের সিংহাসন রচনার প্রকৃষ্ট পদ্ধতি উদ্ভাবন করিয়া যান। ইতিপূৰ্ব্বে একদিকে যেমন বিজেত্ব-সুলভ অশ্রদ্ধা ও স্বভাবজ সংস্কারের বশবৰ্ত্তী হইয়া মুসলমানগণ হিন্দুর প্রতি বীতরাগ ছিলেন, হিন্দুরা ও আচার-বর্জিত ম্লেচ্ছ বলিয়া তাহাদিগকে সেইরূপ ভীতি বিমিশ্রিত ঘৃণার চক্ষেই দেখিতেন । মহাত্মা আকবর হিন্দু চরিত্রের মহত্ব, তাহার শান্তি প্রবণতা, প্রতি, বিশ্বাস প্রভৃতি যথাযথ হৃদয়ঙ্গম করিয়া মুসলমানের ঔদ্ধতা ও ধৰ্ম্মান্ধত সংযত করিয়া, তাহার সাম্যভাবে সকলকে প্রীতির চক্ষে দেখিলে, কি ফললাভের সম্ভাবনা, তাহা সবিশেষ অনুধাবন করিয়াছিলেন। সৌভাগাক্রমে রাজার অনুরূপ মন্ত্রীর ও অভাব হয় নাই। ফৈজী, আবুল ফজল, নিজামুদ্দীন প্রভৃতি স্বধী মুসলমান পণ্ডিতগণ সহজেই স্থির করিয়াছিলেন, যতদিন মুসলমানের অন্ধ ধৰ্ম্ম-বিশ্বাস ও বিজেতৃসুলভ ঔদ্ধতা শাস্তমূৰ্ত্তি ধারণ না করিবে, যতদিন মুসলমানরাজের উপর হিন্দুর প্রতি বৰ্দ্ধিত না হইবে, ততদিন ভারতসাম্রাজ্যের প্রকৃত মঙ্গলের আশা সুদূরপরাহত। তখন হিন্দুর শাস্ত্রগ্রন্থ, কাব্য, পুরাণ, দর্শন প্রভৃতি যথাসম্ভব অনুদিত হইল। পদস্থ হিন্দুগণের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করিলে, তাহারাও বাদশাহকে নিজ জাতির অভ্যস্ত প্রীতির চক্ষে দেখিতে লাগিলেন। উদ্ধত্ব রাজপুত নেতৃগণও বিজেতা মুসলমানের গুণে আকৃষ্ট হইয়া, তাহার সহিত বৈবাহিক-বন্ধনে সম্মিলিত হইলেন। রাজা ভগবান দাস, তোড়ল্‌মল্ল, মানসিংহ প্রভৃতি উচ্চতম রাজকাৰ্য্যে নিয়োজিত হইয়া সম্রাটের বিশ্বস্তভাবের সম্পূর্ণ প্রতিদান আরম্ভ করিলেন। হিন্দুললন রাজপুরীতে নবভাবের সঞ্চার করিয়া দিলেন। হিন্দুর প্রতি অবিচারসঙ্গত ব্যবস্থা সমস্ত ক্রমশঃ অন্তহিত হইল। সৰ্ব্ববিধ লোকের কুসংস্কার দূরীকরণের উদ্যোগ হইতে লাগিল। সভ্যজগতের ইতিহাসে সৰ্ব্বধৰ্ম্মাবলীর প্রতি সমব্যবহার এই প্রথম সংস্থাপিত হইল। হিন্দু মুসলমানের পরামর্শ সমভাবে মিলাইয় রাজবিধি প্রণয়ন ও কাৰ্য্যসম্পন্ন করিয়াই মনস্বী আকবর শী ক্ষান্ত হইলেন না। প্রচলিত ধৰ্ম্মমতের সামঞ্জস্ত রক্ষা করিয়া নবধৰ্ম্ম প্রচার করিয়া সমগ্র রাজ্যমধ্যে প্রকত একতা সংস্থাপনেরও উদ্যম হইল। পুনরায় “দিল্লীশ্বরে বা জগদীশ্বরে বা কথার সার্থকতা সাধন হইল।