আমাদের দেশে বর্ণসুষমায় সমৃদ্ধ যে কয়টি পাখী আছে, তন্মধ্যে কাঠঠোকরা একটি। তবে অনেকের ইহার সঙ্গে সাক্ষাৎ পরিচয় নাই, কেন না এই পাখী বৃক্ষবিহারী হওয়ায় বেশীর ভাগ সময় ইহারা বনমধ্যে বা ছায়াঘন কাননমধ্যেই থাকে। আমরা কয়জন কষ্ট স্বীকার করিয়া বিহঙ্গদের আচরণ লক্ষ্য করি?
ইহাদের আহার অন্বেষণপ্রণালী কৌতুহলোদ্দীপক। যে গাছটাকে সাময়িকভাবে শিকারক্ষেত্র করে, তাহাতে প্রথমে প্রায় মূলদেশে যাইয়া বসে এবং গাছের কাণ্ডে চঞ্চুদ্বারা হাতুড়ীর মত ঘা দিতে দিতে ক্রমশঃ উর্দ্ধদিকে অগ্রসর হয়। কখনও কখনও সড়াৎ করিয়া খানিকটা নামিয়া আবার উঠিতে থাকে। এইরূপে যখন একটা গাছের শীর্ষে আসিয়া পৌছে তখন উড়িয়া আর একটি গাছের নিম্নদেশে যাইয়া তাহারও অগ্রভাগের দিকে ক্রমশঃ অগ্রসর হয়।
প্রাণীজগতে কীটপতঙ্গ ও জীবাণুর সংখ্যা করা যায় না। অন্য যে কোনও জীবের তুলনায় এরা লক্ষগুণ বেশী। যদি এই সব কীটপতঙ্গের বিনাশের ব্যবস্থা বিধাতা না করিতেন, তবে এ পৃথিবীতে মানুষ টিঁকিয়া থাকিতে পারিত না। খেচর জগতের প্রাণীরা, অর্থাৎ পাখীরা, বহু লক্ষ কীট প্রতিদিন উদরসাৎ করিয়া, এই পৃথিবীকে মামুষের বাসোপযোগী করিয়া দেয়।
পাখী যে তার বিচিত্র বর্ণ বা সুমধুর সঙ্গীতে শুধু আমাদের চিত্তবিনোদনের জন্য সৃষ্ট হইয়াছে তাহা নহে। আমাদের খাদ্যশস্য উৎপাদনে এবং আমাদের বাণিজ্যসম্পদ সংরক্ষণে সাহায্য করে বলিয়াই ইহাদের নিকট সকল মনুষ্যসমাজ কৃতজ্ঞ।