খঞ্জন সংস্কৃত সাহিত্যে কবিদের অতিশয় প্রিয় পাখী। নারী সৌন্দর্য্যের উপমা আবিষ্কারে সংস্কৃত কবিরা ছিলেন অদ্বিতীয়। এবং নারীর নয়নে তাঁরা খঞ্জনের সাদৃশ্য দেখিতে পাইয়াছিলেন। আকৃতিসাদৃশ্যে কি প্রকৃতিসাদৃশ্যে এই উপমার সৃষ্টি হইয়াছিল বলিতে পারি না। প্রায় পচিশ বছর পূর্ব্বে খুব সম্ভবতঃ “ভারতী” পত্রিকাতে আচার্য্য শ্রীঅবনীন্দ্র নাথ ঠাকুর নারী সম্বন্ধে সংস্কৃত উপমাগুলি চিত্রসাহায্যে বর্ণনা করিয়াছিলেন। তাঁহার মতে খঞ্জনের সুঠাম অবয়বের গঠনাকৃতির সহিত চোখের গড়ন তুলনীয়। কিন্তু আমার মনে হয় যে কারণে কোনও কোনও রমণীকে সফরীনয়না বলা হয়, সেই কারণেই সদাচঞ্চল এই পাখীটির অস্থির প্রকৃতির জন্য নারীবিশেষের নয়নকে খঞ্জন-নয়ন বলা হইয়াছে, এরূপও হইতে পারে।
সে যাহা হউক, একথা সত্য যে এই পাখীর দেহের গঠন-পরিপাট্য যে কোনও রেখাচিত্রকরে চিত্ত আকর্ষণ না করিয়া পারে না। সব পাখীর গড়ন মনোহর নহে। যেমন “বসন্ত বাউরী” বা “ছাতারে”। প্রথমটি বেঁটে, দ্বিতীয়টি ঢ্যাপসা। অথচ দোয়েল, ফিঙ্গে প্রভৃতি পাখী অবয়ব কেমন সুঠাম। খঞ্জনের গঠনও সেইরূপ। আকৃতির সৌন্দর্য্যের সহিত সমতা রক্ষা করিয়াই প্রকৃতিও লালিত্যপূর্ণ। ইহাদের দেহ বোধহয় আয়তনে চড়ুই পাখীর মত, কিন্তু দীর্ঘ পুচ্ছটির জন্য তদপেক্ষা বৃহত্তর দেখায়। এই পুচ্ছটি অনবরত চলিতে ফিরিতে উর্দ্ধ অধঃ দোলায়মান হয়। যতক্ষণ এই পাখী ভূমির উপর বিচরণ করে ততক্ষণ লেজটি কম্পায়মান হওয়ায় ইহাকে সব সময় নৃত্যপরায়ণ বলিয়া মনে হয়। এই লক্ষণ হইতেই ইহার ইংরাজী নাম হইয়াছে “ওয়্যাগটেল”।