পড়িয়া দোল খাইতে খাইতে ওড়ে, মনে হয় বাতাসে ঢেউয়ের উপরে ভাসিয়া চলিয়াছে। ইহার উড়িবার রীতি দেখিলেই বুঝা যাইবে যে আকারে ক্ষুদ্র হইলেও এই পাখীটির ডানায় খুব শক্তিশালী। তাহার কারণ আছে।
বাংলাদেশে আমরা যে সব খঞ্জন দেখি, তাহারা এদেশের অধিবাসী নহে। শীতকাল মাত্র ইহারা আমাদের দেশে যাপন করে। কোকিল, দোয়েল বা বসন্ত পাখী যেমন আমাদের বসন্ত ঋতুর বার্ত্তাবহ তেমনি খঞ্জন ও ইহার পরে বর্ণিত “বাঁশপাতি”, ইহারা হিমঋতুর বার্ত্তাবহ। এই দুইটি পাখী যেদিন দেখিতে পাইবেন, সেইদিনই বুঝিবেন হৈমন্তিক বাতাস সুরু হইয়াছে এবং কিঞ্চিৎ গরম কাপড় অঙ্গে চড়ানো প্রয়োজন, নইলে ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রভৃতি সভ্য পীড়া ধরিতে পারে। যদি ঋতু পরিবর্ত্তনের সময় সাবধানতা অবলম্বন করিতে চান, এই পাখীদের দিকে লক্ষ্য রাখিলে কখনও ভুল হইবে না। ঋতু পরিবর্ত্তন বুঝিবার একটা অশিক্ষিতপটুত্ব বা সহজবুদ্ধি পশুজগতের অধিবাসীদের স্বাভাবিক। তন্মধ্যে পাখীদের আবার ইহার বোধশক্তির মাত্রাটা যেন সমধিক।
কোকিল ও বসন্ত পাখী ভারতবর্ষেরই বাসিন্দা। কোকিল যদিই বা কোথাও হাওয়া বদলাইতে যায়, দেশ ছাড়িয়া সে যায় না। বসন্ত বাউরী বেচারী একেবারেই কেরাণী মানুষ কোথাও বেড়াইতে যাইবার সঙ্গতি তাহার নাই। কেরাণী বাবু (রেলের না হইলে) আর্থিক সঙ্গতির অভাবে দেশভ্রমণে অপারগ। বসন্ত বাউরী বেচারীর শারীরিক সঙ্গতির অভাব। খঞ্জন ও বাঁশপাতি ইহারা ভারতের বাহিরে উত্তরাপথ হইতে আগমন করে এবং আমাদের ভূতপূর্ব্ব বিলাতী শাসনকর্ত্তাদের মতই এদেশে স্বল্পকালবিহারী। তবে ঐ বিলাতী পুঙ্গবেরা আমাদের ভীতি ও অস্বস্তির কারণ হইয়া থাকিতেন। কিন্তু খঞ্জন ও বাঁশপাতি আমাদের দাসত্বকুণ্ঠিত মনে কিঞ্চিৎ আনন্দ, হর্ষ ও সজীবতা সঞ্চার