পাতা:বাঙ্গলার পরিচিত পাখী.djvu/১১৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
খঞ্জন
৯৯

 পশ্চিম ভারতে একটু বৃহত্তর একজাতীয় খঞ্জন আছে। যাহার বর্ণ বিন্যাস অনেকটা দোয়েলের মতো। সেই পাখীটির সঙ্গীত খুব মিষ্ট ও মনোহর এবং সে যাযাবর নহে ভারতেরই অধিবাসী। সে জলের ধারেও থাকে, আবার আমাদের গৃহচূড়ায় আসিয়া উপবেশন করে। খঞ্জন মনুষ্য লোকালয়ের নিকটেও থাকে, দূরে নদী বা জলাশয় প্রান্তেও থাকে। উন্মুক্ত স্থানেই ইহারা বিচরণ করে। বনে জঙ্গলে ইহারা যায় না। ইহাদের কণ্ঠসঙ্গীত সুর সমন্বিত। সেইজন্য ইহা খাঁচার পাখী হিসাবে সমাদৃত। বাঙ্গলার পশ্চিম সীমান্তের জেলাগুলিতে ইহাকে দেখিতে পাওয়া যায়।

 ইহারা কীটভুক পাখী হইলেও অসামাজিক নহে, অনেকগুলিকেই একত্র দেখা যায়। অসামাজিক হইলে মরুকান্তার পার হইয়া শতশত যোজন পথ যাহাদের অতিক্রম করিতে হয় তাহারা একাকী এত দূরপথের বিঘ্নবিপদের সম্মুখীন হইতে সাহস পায় না। দলবদ্ধ হইয়াই তাহাদের চলিতে ফিরিতে হয়। সুতরাং কীটভুক্‌ পাখী হওয়া সত্ত্বেও খঞ্জন সামাজিক পাখী। একথাটা কবি কালিদাসও জানিতেন। প্রাকৃতিক জগতের জ্ঞান তাহার খুব নির্ভুল ছিল বলিয়াই তিনি সুনিপুণ উপমাবিশারদ বলিয়া খ্যাতিলাভ করিয়াছেন। অসম্ভব কিছু দর্শন করিলে দর্শক ভাগ্যলাভ করে এরূপ একটা বিশ্বাস সব সমাজেই প্রচলিত। তাই কালিদাস একস্থানে বলিয়াছেন যে নলিনীদলমধ্যে খঞ্জনকে যে একাকী দেখিতে পাইবে সে রাজা হইবে।

“একোহি খঞ্জন বরো নলিনীদলস্থো
দৃষ্টঃ করোতি চতুরঙ্গ বলাধিপত্যম্।
কিং বা করিষ্যতি ভবদ্বনারবিন্দে
জানামি নো নয়ন খঞ্জনযুগ্মনেতৎ॥”