দেহের গঠন অতি সুঠাম। এর দেহের গঠনে এবং চালচলনে বেশ একটা লীলায়িত ছন্দ আছে। যখন সে পুচ্ছটিকে উচ্চে তুলিয়া গাছের ডালে কিংবা কোনও মাটির ঢিপির উপর অথবা ঘরের দাওয়ায় অসিয়া বসে,তখন মনে হয় সে সমস্ত বিশ্বচরাচরকে বলিতেছে—“আমার চাইতে সুন্দর কিছু দেখাও দেখি।” মানুষের সান্নিধ্যে সে বিচলিত হয় না এবং মনুষ্যাবাসের মধ্যেই বাস করিতে যেন সে পছন্দ করে।বাগানের অপ্রশস্ত পথে চলিতে চলিতে হয়তো দেখা যায় এই পাখী ঠিক পথের মাঝখানে ভূমির উপর বসিয়া কোনও কীটের স্বাদুতা পরীক্ষা করিতেছে। আপনাকে দেখিয়া সে নিঃশব্দে পাখা মেলিয়া উত্থান পূর্ব্বক অদূরে শাখাগ্রে যাইয়া বসিবে। শাখাটি খুব উঁচু নহে,হয়তো হাত বাড়াইলেই পাখীটিকে স্পর্শ করা যাইবে। সেখান হইতে কুঞ্চিত নয়নে আপনাকে লক্ষ্য করিবে। সমুখ দিয়া চলিয়া গেলে ত্রস্ত বা সঙ্কুচিত হইয়া পলাইবার চেষ্টা করিবে না। বাংলার পল্লীর স্থিরা প্রকৃতির বুকে এই ক্ষিপ্র, চঞ্চল পাখী তার চলাফেরার বিদুৎগতি দিয়া একটা সজীবতার সঞ্চার করে।
অতি প্রত্যুষে, সূর্য্যোদয়ের পূর্ব্বে ব্রাহ্ম মুহূর্ত্তে সে নিবাসবৃক্ষ ত্যাগ করে। কোনও একটি উচ্চ বৃক্ষের সর্ব্বোচ্চ শাখার অগ্রভাগে বসিয়া গলা ছাড়িয়া সে উচ্ছ্বসিতভাবে প্রভাতবন্দনা করে। ইহার কণ্ঠস্বর সুদীর্ঘ শীষ,ধ্বনি খাদে আরম্ভ হইয়া ক্রমশঃ উচ্চগ্রামে উঠিয়া পুনরায় ধীরে ধীরে নামিয়া শেষ হয়। মাঝে মাঝে আসন পরিবর্তন করিয়া ঝাড়া দুই ঘণ্টা লহরীর উপর লহরী সুর ঢালিয়া চারিদিক ঝংকৃত করিয়া তোলে। প্রকৃতির বুকে বাংলা দেশে আমরা যত রকম পাখী দেখি তার মধ্যে ইহারই গান মাধুর্য্যে শ্রেষ্ঠতম বলিয়া স্বীকৃত। “শামা”কে বাদ দিলে দোয়েলই, শুধু বাংলার নহে,সমগ্র ভারতের গায়কপাখীদের মধ্যে প্রথম আসন অলঙ্কৃত করিতেছে। সঙ্গীত--