পারদর্শিতায় ও মধুরতায় “শামা”ই শ্রেষ্ঠ; তবে মুক্ত, স্বাধীন অবস্থায় শামার সঙ্গে আমাদের পরিচয় হয় না, খাঁচার ভিতরেই শামার সঙ্গীত শ্রবণ করিবার সুযোগ আমাদের হইয়া থাকে। কেন না, শামা গভীর অরণ্য-নিবাসী। মনুষ্যাবাস হইতে বহু দূরে সে বাস করে।
সকালবেলা সমস্ত গ্রাম-প্রান্ত যখন বেশ কিছুক্ষণ রৌদ্রে স্নান করিয়াছে, তখনই সঙ্গীত থামাইয়া দোয়েল আহার অন্বেষণে মন দেয়। ভূমির উপর হইতেই এই পাখী আহার্য্য সংগ্রহ করে। বৃক্ষের উপর পত্রমধ্যে কিংবা শূন্যপথে সে খাদ্য সংগ্রহ করে না। এক একটা পাখীর খাদ্যসংগ্রহ করিবার স্থান ও রীতির প্রভেদ লক্ষ্য করিবার বিষয়। খাদ্য অন্বেষণে আমাদের প্রাঙ্গণে, ছাঁচতলায়, দাওয়ার নীচে আসিয়া আহার্য্য সংগ্রহ করিতে ইহা আদৌ সঙ্কোচ বোধ করে না।
কীট-পতঙ্গই ইহার একমাত্র ভোজ্য। শাকসব্জী ফলমূল ইহার মোটেই প্রিয় নহে। বেশীর ভাগ কীটভূক্ পাখীদের বিশেষত্ব এই যে তাহারা দলবদ্ধ হইয়া থাকিতে চায় না। ইহার কারণ ইহাই অনুমিত হয় যে প্রকৃতির খয়রাতী লঙ্গরখানায় কীটপতঙ্গের প্রাচুর্য্য সর্ব্বত্র সমান নয়। অনেকগুলি পাখী একত্র থাকিলে আহার্য্যের পরিমাণ শীঘ্র শীঘ্র নিঃশেষিত হইবে সেইজন্য বোধ হয় ইহারা দূরে দূরে থাকে। লক্ষ্য করিলেই বুঝা যাইবে যে বাগানের এক একটা অংশে যেন এক এক জোড়া দোয়েলের কায়েমীস্বত্ব। প্রত্যেক দম্পতির এক একটা তালুক—যার চৌহদ্দীও বেশ নিশানা করা আছে। একজন নিজ চৌহদ্দীর বাহিরে অন্যের এলাকায় ভুলিয়াও যায় না। ভৌগোলিক আত্মনিয়ন্ত্রণে ইহারা স্বভাবসিদ্ধ।
দোয়েল এত অমিশুক যে তার গৃহিণীর সঙ্গেও সম্বন্ধটা খুব ঘনিষ্ঠ নহে। ভর্ত্তার মেজাজ খুব ভাল করিয়া জ্ঞাত থাকায়