পাতা:বাঙ্গলার পরিচিত পাখী.djvu/২৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১০
বাঙ্গলার পরিচিত পাখী

শুভ্র। যখন পুচ্ছটি গুটাইয়া রাখে তখন মনে হয় দুই পার্শ্বে দুইটি সাদা রেখা পড়িয়া আছে।

 গভীর অরণ্যানীমধ্যে ইহার বাস বলিয়া বাংলা দেশের বেশীর ভাগ অঞ্চলে ইহাকে পাওয়া যায় না। তবে মেদিনীপুর ও বাঁকুড়ার যে অংশ ছোটনাগপুরের পাশে সেই সব স্থানে, আসাম-প্রান্তে কতকগুলি স্থানে এবং হিমালয়ের পাদমূলের যে অংশ বাংলার মধ্যে পড়িয়াছে সে সব স্থানে ইহাকে নিশ্চয়ই পাওয়া যায়। ভারতবর্ষের সমস্ত অরণ্যপ্রদেশেই একে পাওয়া যায়—সিংহল দ্বীপ পর্য্যন্ত।

 শুধু যে গভীর অরণ্যেই ইহারা বাস করে তাহা নহে। দোয়েলের মত বৃক্ষচুড়ায় বা ঐরূপ উন্মুক্ত স্থানেও সে আসে না। অত্যন্ত ঘন পত্রবীথী বা ঝোপের মধ্যেই সে বিচরণ করে, ভূমি হইতে অধিক উর্দ্ধে ওঠে না। কীটভূক পাখী হিসাবে, ভূমির উপর বা তাহার নিকট যে সব কীট পাওয়া যায় তাহাই শিকার করা ইহার অভ্যাস। দোয়েলের মত আগডালে উঠিয়া গান গাওয়া ইহার অভ্যাস নয়। নিম্নশাখায় বসিয়াই উচ্ছ্বসিত কণ্ঠধারা দ্বারা সে বনানী মুখরিত করে—কিন্তু সামান্য শব্দেই চমকিত হইয়া মুহূর্ত্তমধ্যে ঘন পত্রান্তরালে আত্মগোপন করে। দোয়েলের মত সপ্রতিভ সে আদৌ নহে। অথচ আশ্চর্য্যের বিষয়, খাঁচায় যখন বন্দী হয় তখন ইহার সব সঙ্কোচ কাটিয়া যায়। পক্ষিগৃহমধ্যে ইহাকে বেশ সাহসী পাখী হিসাবেই দেখিয়াছি। আরও একটা আশ্চর্য্য এই যে স্বাধীন জীবনে ইহা আমিষাশী—কিন্তু মনুষ্যগৃহে ইহা আমিষ ও নিরামিষ দ্বিবিধ আহারই তৃপ্তি সহকারে গ্রহণ করে।

 দোয়েলের মতই ইহার প্রকৃতি অসামাজিক, দলবদ্ধভাবে থাকে না এবং দোয়েলের মতই স্ত্রীপাখিটিকে প্রজননঋতু ছাড়া অন্য ঋতুতে বেশী কাছে আসিতে দেয় না। স্ত্রীপাখীর গাত্রবর্ণ পুরুষ-পাখীর মত, তবে নিষ্প্রভ ও ঔজ্জ্বল্যহীন।